Posts

Showing posts from January, 2024

সংরক্ষিত বন ও বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ সম্পর্কে বর্ণনা দাও।

সংরক্ষিত বনাঞ্চল (Reserve Forest) : রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে অরণ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ, কিন্তু গবেষণার অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করা যায়, তাকে সংরক্ষিত বন বলে। কোনো কারণে বনাঞ্চলে যদি প্রাণীর সংখ্যা কমে যায়, তাহলে রাজ্য সরকার সেই বনাঞ্চলে পর্যটকদের প্রবেশ, বনজ সম্পদ আহরণ, চাষ আবাদ, পশু চারণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়।  ■ বৈশিষ্ট্য: (i) কেন্দ্রীয় সরকারের বনদপ্তর আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। Indian Forest Act অনুযায়ী প্রাণী শিকার ও গাছ কাটা নিষিদ্ধ। (ii) সমগ্র এলাকায় বনরক্ষী দিবারাত্র প্রহরারত থাকে।  ■ উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের বৈকুণ্ঠপুর, অসমের কাজিরাঙা, গুজরাটের গির। বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserve): UNESCO-র Man and Biosphere Reserve কর্মসূচির অন্তর্গত যে শলজ ও জলজ অঞ্চলে গোটা বাস্তুতন্ত্র ও তার সম্পূর্ণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হয়, তাকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে। এই অঞ্চলে জীববৈচিত্রত্র্য সংরক্ষণ ছাড়াও সেই অঞ্চলে আদিবাসী ও তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, জীবিকা ও সংস্কৃতিরও সংরক্ষণ করা হয়।  ■ বৈশিষ্ট্য: (১)এই অঞ্চলে জীবকূল স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক পরিবেশেই বৃদ্ধি পাবে এবং প্রজনন করবে। মা

জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

জাতীয় উদ্যান (National Park): প্রাকৃতিক-সৌন্দর্যময় যেসব স্থানে সমস্তরকম গাছপালা ও বন্য জীবজন্তুরা নিজস্ব পরিবেশে জাতীয় সংবিধান প্রণীত আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত হয়, তাদের জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্ক বলে। বৈশিষ্ট্য: (i) এটি ভারত সরকারের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। (ii) শিকার সম্পূর্ণ নিষেধ, আগ্নেয়াস্ত্রসহ শিকারির প্রবেশ নিষেধ, তবে পর্যটক ভিতরে যেতে পারে। (iii) প্রাকৃতিক-ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক বস্তু, বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ স্থায়ীভাবে আইন মারফত করা হয়ে থাকে। (iv) সমগ্র বাস্তুতন্ত্র রক্ষিত হয়ে থাকে। (v) এই বনভূমিতে প্রাণীহত্যা, গাছকাটা, মাছধরা, বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। (vi) এটি সবচেয়ে বড়ো পরিসরের উদ্যান। উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের গোরুমারা, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, উত্তরাখণ্ডের করবেট, মধ্যপ্রদেশের কানহা এবং শিবপুরি।  অভয়ারণ্য (Sanctuary): যে সংরক্ষিত অঞ্চলে গাছপালার সঙ্গে বিশেষ কোনো বন্য প্রজাতির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা আছে, তাকে অভয়ারণ্য বলে। অভয়ারণ্য বনাঞ্চল স্থাপনের উদ্দেশ্য হল- (i) চরম বিপন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ গুলিকে শিকারী এবং মানুষের হাত থেকে

এক্স-সিটু সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

এক্স সিটু সংরক্ষণ (Ex-situ Conservation): উদ্ভিদ ও প্রাণীর নিজস্ব প্রাকৃতিক আবাসস্থলের বাইরে তাদের সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে এক্স সিটু সংরক্ষণ বলে। যেমন- চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ক্রায়োসংরক্ষণ। (a) চিড়িয়াখানা (Zoological garden): পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার চিড়িয়াখানা, দার্জিলিং-এর চিড়িয়াখানা উল্লেখযোগ্য চিড়িয়াখানা। ■ বৈশিষ্ট্য: (i) চিড়িয়াখানায় দেশ-বিদেশের প্রাণী প্রজাতি সংরক্ষিত হয়। (ii) প্রাণীরা এখানে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে না, শিকার করতে পারে না। এদের খাঁচার মধ্যে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয়। ■ সংরক্ষিত প্রাণী: বাঘ, সিংহ, ভালুক, জিরাফ, জেব্রা, গন্ডার, বানর, হরিণ, নানা প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ইত্যাদি। (b) বোটানিক্যাল গার্ডেন (Botanical Garden): পশ্চিমবঙ্গের শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন বিখ্যাত। এ ছাড়া দার্জিলিং-এর বোটানিক্যাল গার্ডেনও প্রসিদ্ধ। ■ বৈশিষ্ট্য: (i) দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষিত। (ii) উদ্ভিদগুলি স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠেছে, বংশবিস্তার করতে পারে। তবে এদের পরিচর্যা করার ব্যবস্থা আছে। ■ উদাহরণ: শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের সবচেয়ে দর্শনীয় উদ্ভিদ হল বট গাছ (Ficus beng

বিশ্ব খাদ্যসংকটের কয়েকটি ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করো। খাদ্যসংকটের ফলাফলগুলি কী কী?

Image
বিশ্ব খাদ্যসংকট-সংক্রান্ত ঘটনা: গত শতক থেকে উল্লেখযোগ্য খাদ্যসংকটের ঘটনাগুলি হল- ① রাশিয়ার দুর্ভিক্ষ (1932-1933): দুই বছরব্যাপী এই দুর্ভিক্ষ হল মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। রাশিয়ার ইউক্রেন, ভলগা, কাজাকাস্থান অঞ্চল জুড়ে এই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। উৎপন্ন খাদ্যের বিরাট অংশ ভবিষ্যতের জন্য মজুত করে রাখার উদ্দেশ্যে ও কিছু ভ্রান্ত সরকারি নীতির কারণে এই দুর্ভিক্ষ হয়। ② আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্যসংকট: [i] খরা, জলসংকট, মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি নানা কারণে ইথিওপিয়া, সুদান, কেনিয়া, সোমালিয়া প্রভৃতি দেশে দীর্ঘকালীন খাদ্য-সমস্যা দেখা দিয়েছে। [ii] মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেন, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশগুলিতে যুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ৪০ মিলিয়ন লোক বর্তমানে (2017) খাদ্য সমস্যার সম্মুখীন। ③ ভারতের খাদ্যসংকট: 1943-45 সালে বাংলার দুর্ভিক্ষজনিত কারণে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। এই খাদ্যসংকটের ফলে প্রায় 20 লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।  খাদ্যসংকটের ফলাফল ① মূল্যবৃদ্ধি: খাদ্যসংকটের সময়ে খাদ্যসংকট চাহিদা-জোগানের বড়ো পার্থক্য ঘটে, তাই স্বল্প খাদ্য কিন্তু বেশি মানুষ থাকার দরুন খাদ্যের

অর্থনীতি কাকে বলে? সংজ্ঞা, ক্ষেত্রসমূহ, গুরুত্ব, ভবিষ্যৎ

Image
অর্থনীতি কাকে বলে ?  অর্থনীতি বা অর্থশাস্ত্র সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা যা পণ্য এবং সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হল সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। অর্থনীতির সংজ্ঞা অর্থনীতির সংজ্ঞা বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের দ্বারা বিভিন্নভাবে দেওয়া হয়েছে। তবে, সাধারণভাবে অর্থনীতিকে নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত করা হয়: * **অর্থনীতি হল পণ্য এবং সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনার বিজ্ঞান।** * **অর্থনীতি হল সম্পদের সীমিত সম্পদ এবং অফুরন্ত চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য অর্জনের বিজ্ঞান।** * **অর্থনীতি হল একটি সমাজ বা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার অধ্যয়ন।** অর্থনীতির ক্ষেত্রসমূহ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: * **ব্যষ্টিক অর্থনীতি:** ব্যক্তি, পরিবার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। * **মহাকাশ অর্থনীতি:** একটি দেশের অর্থনীতির বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আলোচনা করে। * **আন্তর্জাতিক অর্থনীতি:** বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। * **কৃষি অর্থনীতি:** কৃষ

বৃত্ত কাকে বলে

Image
**বৃত্ত কাকে বলে** বৃত্ত হলো একটি দ্বিমাত্রিক আকৃতি, যা একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সমান দূরত্বে অবস্থিত বিন্দুগুলির সমন্বয়ে গঠিত। এই নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে বৃত্তের কেন্দ্র বলা হয়। বৃত্তের পরিধি হলো বৃত্তের কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী বিন্দুগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি সরল রেখা। বৃত্তের ক্ষেত্রফল হলো বৃত্তের পরিধি দ্বারা কেন্দ্রের দূরত্বের বর্গের অর্ধেক। **বৃত্তের সংজ্ঞা** ইউক্লিডীয় জ্যামিতি অনুসারে, বৃত্ত হলো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে বিন্দু থেকে সমান দূরত্বে এবং একই সমতলে একবার ঘুরে আসা। অর্থাৎ, বৃত্তের পরিধিস্থ সকল বিন্দু কেন্দ্র থেকে একটি দূরত্বে অবস্থিত। **বৃত্তের কেন্দ্র** বৃত্তের কেন্দ্র হলো এমন একটি বিন্দু, যে বিন্দু থেকে বৃত্তের পরিধিস্থ সকল বিন্দুর দূরত্ব সমান। বৃত্তের কেন্দ্রটি একই সমতলে অবস্থিত। **বৃত্তের পরিধি** বৃত্তের পরিধি হলো বৃত্তের কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী বিন্দুগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি সরল রেখা। বৃত্তের পরিধিকে C দ্বারা প্রকাশ করা হয়। বৃত্তের পরিধির সূত্র হলো: ``` C = 2πr ``` যেখানে, * C হলো বৃত্তের পরিধি * π হলো একটি গাণিতিক ধ্রুবক যার মান প্রায়

ন্যায়দর্শনে ঈশ্বরের ভূমিকা ও স্বরূপ কী তা আলোচনা করো।

ন্যায়দর্শনে ঈশ্বরের ভূমিকা মহর্ষি গৌতমের ন্যায়সূত্রে ঈশ্বর সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা পরিলক্ষিত না হলেও, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। ন্যায়সূত্রের চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম আহ্নিকে তিনটি সূত্রে ঈশ্বরের উল্লেখ দেখা যায়। বৈশেষিক সূত্রে কিন্তু ঈশ্বর সম্বন্ধে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ করা নেই। কিন্তু পরবর্তীকালে ন্যায়-বৈশেষিক ভাষ্যকারগণ ঈশ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, মোক্ষলাভের নিমিত্ত ঈশ্বরের কৃপা অবশ্যই অপরিহার্য। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, মহর্ষি বাৎস্যায়ন, উদ্যোতকর, উদয়ন, বাচস্পতি মিশ্র, জয়ন্তভট্ট এবং গঙ্গেশোপাধ্যায় প্রমুখ ন্যায় ভাষ্যকারগণ ঈশ্বরের সঙ্গে মোক্ষ বা অপবর্ণের সম্বন্ধ নির্দেশ করেছেন। তাঁরা দাবি করেন যে, ঈশ্বরের করুণা ছাড়া জীব কখনোই তত্ত্বজ্ঞান লাভে সমর্থ নয়। এর ফলে জীব মোক্ষলাভে ব্যর্থ হয়। ফলত ন্যায়দর্শনকে অনেকে নিরীশ্বরবাদীরূপে অভিহিত করলেও, ঈশ্বরবাদের বিষয়টি সেখানে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়েছে। ন্যায়দর্শনে ঈশ্বরের স্বরূপ ন্যায়দর্শনে ঈশ্বরের স্বরূপ বা প্রকৃতি হল- সৃষ্টি, স্থিতি এবং লয়ের কারণরূপে ঈশ্বর:  ন্যায়দর্শনে যে বারোটি

বিবেকানন্দের মতে উপলব্ধির পথগুলি কী?

বিবেকানন্দের মতে উপলব্ধির পথ উপলব্ধি বলতে বিবেকানন্দ আত্মজ্ঞানের উপলব্ধিকেই বুঝিয়েছেন। এ হল আত্মার অমরত্বের উপলব্ধি। আত্মার সঙ্গে ব্রহ্মের একাত্মের উপলব্ধি। এরূপ উপলব্ধিই হল মানবজীবনের চরম ও পরম কাম্য। সাধক জীব সবসময়ই এরূপ উপলব্ধির পথেই এগিয়ে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই আত্মোপলব্ধির পথগুলি কী? এরূপ প্রশ্নের উত্তরে স্বামী বিবেকানন্দ বিভিন্ন প্রকার যোগ-এর কথা বলেছেন। আত্মোপলব্ধিতে 'যোগ' শব্দটির অর্থ:  যোগ শব্দটির অর্থ হল দুটি- 'একত্রিত বা সংযুক্ত হওয়া' আর 'নিয়মানুবর্তি বা অভ্যাস'। সাধারণত আমরা এই দুটি অর্থের যে-কোনো একটিকে গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ 'যোগ' বলতে এই দু-প্রকার অর্থকেই বুঝিয়েছেন। তাঁর মতে, জীবের মুক্তিলাভই হল মৌল উদ্দেশ্য। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা পরমব্রত্মের সঙ্গে একাত্ম হয়ে 'অহং ব্রহ্মাস্মি'রূপে অভিহিত হই, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মুক্তি নেই। মুক্তির কামনায় আমাদের এই নিরন্তর প্রচেষ্টা কিন্তু কখনোই একমুখী নয়। এ হল এক বহুমুখী প্রচেষ্টা, কিন্তু প্রত্যেকটি প্রচেষ্টাই অবিদ্যার আবরণকে সরিয়ে মানুষকে পরমব্রত্মমুখী করে তোলে। চতুর্বিধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল/ প্রভাব

মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫ খ্রি.)। জার্মানি, ইটালি, জাপান ও তাদের সহযোগী বিভিন্ন দেশকে নিয়ে গঠিত অক্ষশক্তি এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা ও তাদের সহযোগী বিভিন্ন দেশকে নিয়ে গঠিত মিত্রশক্তির মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে জার্মানির নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তির পরাজয় ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল/প্রভাব বিভিন্ন দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। যেমন- [1] ধ্বংসলীলা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বের প্রচুর সামরিক ও অসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়। অন্তত ৫৭ কোটি মানুষ এই যুদ্ধের ফলে প্রাণ হারান। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে নিঃস্ব, রিস্ত অবস্থায় নতুন দেশের ফুটপাতে আশ্রয় নেয়। [2] যুদ্ধাপরাধের বিচার : বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত অক্ষশক্তির যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তিদানের উদ্যোগ নেয়। ২১ জন নাৎসি আধিকারিককে শান্তি-বিরোধী, মানবতা-বিরোধী ও যুদ্ধ অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাদের ১৪ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং বাকিদের কারাদণ্ড হয়। [3] ইয়াল্টা সম্মেলন :  ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের শুরুত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অগ্রগতির বিবরণ দাও।

জার্মানি কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণের (১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ খ্রি.) পরিপ্রেক্ষিতে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি ৩ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের পক্ষে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অগ্রগতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নানা ঘটনার ঘনঘটার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে। [1] পোল্যান্ড দখল : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাসের মধ্যে জার্মানি ও রাশিয়া পোল্যান্ড দখল করে নেয়। পশ্চিম পোল্যান্ডে জার্মানি এবং পূর্ব পোল্যান্ডে রাশিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। [2] রাশিয়ার অগ্রগতি : ইতিমধ্যে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও জার্মান আক্রমণের সম্ভাবনায় রাশিয়া আতঙ্কিত ছিল। এজন্য রাশিয়া নিজের নিরাপত্তা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে দ্রুত ফিনল্যান্ড, এস্টোনিয়া, লাৎভিয়া ও লিথুয়ানিয়া দখল করে নেয়। [3] জার্মানির অগ্রগতি : জার্মানি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ডেনমার্ক ও নরওয়ে, মে মাসে বেলজিয়াম, হল্যান্ড ও লাক্সেমবার্গ এবং জুন মাসে ফ্রান্স দখল করে নেয়। [4] ইংল্যান্ড আক্রমণ : জার্মানি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট ইংল্যা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন কারণ আলোচনা করো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫ খ্রি.) ছিল বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে একদিকে ছিল অক্ষশক্তিভুক্ত জার্মানি, ইটালি, জাপান প্রভৃতি রাষ্ট্র এবং অন্যদিকে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা প্রভৃতি রাষ্ট্র।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পশ্চাতে বিভিন্ন কারণ ছিল। [1] ত্রুটিপূর্ণ ভার্সাই সন্ধি : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রশক্তি পরাজিত জার্মানির ওপর তীব্র বৈষম্যমূলক ভার্সাই সন্ধি (১৯১৯ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়। এর দ্বারাㅡ[1] জার্মানির বিভিন্ন ভূখণ্ড, শিল্পাঞ্চল, খনি ও উপনিবেশগুলি কেড়ে নেওয়া হয়, [u] জার্মানির সামরিক শক্তি হ্রাস করে তাকে ক্ষুদ্র বেলজিয়ামের চেয়েও দুর্বল করা হয়, (iii) জার্মানির ওপর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয়। জার্মানি এই 'একতরফা চুক্তি' ভেঙে ফেলার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। [2] উপনিবেশিক লড়াই : বিংশ শতকের শুরুতে বিশ্বের অধিকাংশ উপনিবেশ ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, আমেরিকা প্রভৃতি দেশের দখলে চলে যায়। পরবর্তীকালে ইটালি, জাপান প্রভৃতি দেশ খুব বেশি উপনিবেশ দখল করার সুযোগ না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়। তাছাড়া ভা

ন্যায় মতে কীভাবে আত্মার মুক্তি ঘটে তা আলোচনা করো।

 ন্যায় মতে আত্মার মুক্তি বা নিঃশ্রেয়স অপরাপর আস্তিক দার্শনিক সম্প্রদায়গুলির ন্যায় নৈয়ায়িকগণ আত্মার মুক্তি বা নিঃশ্রেয়সকেই চরম ও পরম পুরুষার্থরূপে উল্লেখ করেছেন। আত্যন্তিক দুঃখ থেকে নিবৃত্তিকেই ন্যায় বৈশেষিক দর্শনে মোক্ষ বা মুক্তিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। বাৎস্যায়নভাষ্যে 'নিঃশ্রেয়স' শব্দের অর্থ করা হয়েছে-  নিশ্চিতং শ্রেয়ঃ নিঃশ্রেয়সম। অর্থাৎ, যা নিশ্চিত শ্রেয়রূপে গণ্য, তাকেই বলা হয় নিঃশ্রেয়স বা মুক্তি। ন্যায় মতে, মুক্তিই হল নিশ্চিত শ্রেয়। এই কারণে মুক্তি অর্থেই নিঃশ্রেয়স শব্দটির বহুল প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। দেহবন্ধন থেকে যুক্তরূপে নিঃশ্রেয়স বা মুক্তি:  নৈয়ায়িকদের মতে,আত্মা হল স্বরূপত নির্গুণ, নিষ্ক্রিয় এবং চৈতন্যহীন দ্রব্যস্বরূপ। আত্মা দেহের সঙ্গে যুক্ত হলে, দেহ মনের সঙ্গে যুক্ত হলে, মন ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে, এবং ইন্দ্রিয় বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে তবেই আত্মার বুদ্ধি, দ্বেষ, ইচ্ছা, সুখ, দুঃখ এবং প্রযত্ন প্রভৃতি গুণ আবির্ভূত হয়। মন ও দেহের সঙ্গে আত্মার সংযোগই আত্মার বন্ধাবস্থা। আত্মা যতক্ষণ দেহের সঙ্গে যুক্ত থাকে, ততক্ষণই তার বন্ধনদশা সূচিত হয়। সেক্ষেত্রে তার আত্যন্তিক দুঃখনিবৃত্তির কো

বাংলাদেশ কীভাবে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে?

শক্তিশালী মুঘল সম্রাটদের শেষ প্রতিনিধি ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্য অবক্ষয়ের পথে চলে যায়। দুর্বল উত্তরাধিকারীদের আমলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন সুবা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়। বাংলাদেশ ছিল তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে নবাবি শাসন প্রতিষ্ঠা : * বাংলা সুবার উত্থান:  বাবরের সময়ে বাংলার স্বাধীন সুলতান ছিলেন নুসরত শাহ। তিমি মুঘলবিরোধী জোটে যোগ দেন। ঘর্ঘরার যুদ্ধে (১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে) তিনি পরাজিত হলেও বাংলা স্বাধীন থাকে। পরে সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গিরের আমলে কররানি বংশের ও বারো-ভুঁইয়াদের পতন ঘটলে বাংলাদেশ মুঘল সাম্রাজ্যের একটি সুবা বা প্রদেশে পরিণত হয়। * মুর্শিদকুলি খান- দেওয়ান:  সম্রাট ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে থাকার সময় মুর্শিদকুলি খান বেরারের দেওয়ান ছিলেন। তিনি তার দক্ষতার জন্য সম্রাটের সুনজরে পড়েন। সম্রাট তাকে বাংলার দেওয়ান পদে নিয়োগ করেন (১৭০০ খ্রিস্টাব্দে)। তিনি বাংলার রাজস্ব সংস্কারের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে সম্রাটের বিশ্বাস অর্জন করেন। তিনি সম্রাটকে নিয়মিত বার্ষিক পেশকাশ দান করতেন। এজন্য সম্রাট তাকে দেওয়ানি আদায়ের কাজে স্বাধীনতা দেন। * মুর্শিদকুলি খান- সুবাদা

হায়দরাবাদ কীভাবে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে?

Image
 সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল দরবারের রাজনীতি ও ষড়যন্ত্র প্রবল হয়ে ওঠে। তুরানি গোষ্ঠীর নেতা চিন কিলিচ খান (মির কামার উদ-দিন খান সিদ্দিকি) মহম্মদ শাহ-কে সম্রাট হতে সাহায্য করেন। কিন্তু দিল্লির রাজনীতিতে বিরক্ত হয়ে তিনি হায়দরাবাদ চলে যান। সেখানে তিনি স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে থাকেন। হায়দরাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা : *মির কামার উদ-দিন খান সিদ্দিকি: মুঘল দরবারে অভিজাত গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম ছিল তুরানি বা চিন গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন মির কামার উদ-দিন খান সিদ্দিকি। সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাকে চিন কিলিচ খান, সম্রাট ফাররুখশিয়র তাকে নিজাম-উল-মূলক এবং সম্রাট মহম্মদ শাহ তাকে আসফ ঝা উপাধি দেন। তার কর্মদক্ষতা ও প্রভাবের জন্য তিনি এই উপাধিগুলি লাভ করেছিলেন। হায়দরাবাদ কীভাবে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে? * দিল্লির রাজনৈতিক অবস্থা :  নিজাম-উল-মূলক ফাররুখশিয়রের মৃত্যুর পর (১৭১৯ খ্রি.) সিংহাসন নিয়ে প্রবল দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ষড়যন্ত্র, হত্যাকান্ড ও সন্দেহ এক বিষাক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে। * হায়দরাবাদ রাজ্য প্রতিষ্ঠা:  এই অবস্থায় মির কামার উদ-দিন খান সিদ্দিকি দিল্লি ত্যাগ করে হায়দরাবাদ চলে যান। এখানে

বিবেকানন্দের বক্তব্যের আলোকে কর্মযোগের অর্থ ও উদ্দেশ্য আলোচনা করো।

 বিবেকানন্দের বক্তব্যের আলোকে কর্মযোগের অর্থ কর্মযোগ শব্দটির শব্দগত বিশ্লেষণ-কর্ম+যোগ= কর্মযোগ। কর্ম শব্দটি  সংস্কৃত কৃ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন-যার অর্থ হল কোনো কিছু করা। আর যোগ শব্দের অর্থ হল সুচিন্তিত, সুনিয়ন্ত্রিত ও বিধিবদ্ধ বা বিজ্ঞানসম্মতভাবে কর্ম করা। সুতরাং কর্মযোগ শব্দটির সামগ্রিক অর্থ হল সুনিয়ন্ত্রিত, সুচিন্তিত ও বিধিবদ্ধভাবে কোনো কিছু করা। সুতরাং, কর্মের কৌশল তথা কর্মনৈপুণ্যই হল কর্মযোগ। প্রকৃতপক্ষে সমত্ব চেতনাই হল যোগ শব্দটির প্রকৃত অর্থ। লাভ-অলাভ, জয়-পরাজয় প্রভৃতি সমস্ত কিছুকেই যদি সমান জ্ঞান করে কর্ম করা হয় তাকেই কর্মযোগ বলা হয়। গীতা, উপনিষদ এবং বেদান্ত দর্শনে কর্মযোগের এরূপ ধারণাটিই প্রতিফলিত হয়েছে। বেদান্তের অনুগামী হয়ে বিবেকানন্দও কর্মযোগের এই অর্থ বা ধারণাটিকেই গ্রহণ করেছেন। বিবেকানন্দের বক্তব্যের আলোকে কর্মযোগের উদ্দেশ্য বিবেকানন্দের বক্তব্যের আলোকে কর্মযোগের উদ্দেশ্যগুলি হল- [1] কর্মে আত্মনিয়োগ:  বিবেকানন্দের মতে, প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃগুণ পরিলক্ষিত হয়। আর এই গুণের তারতম্যের জন্যও তাদের কর্ম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরকম হয়। যখন আমাদের মধ্যে তমোগুণ প্রবল হয়

স্বামী বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি কী?

 স্বামী বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি বীরশন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাধারায় বেদ-উপনিষদের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। সুতরাং, তাঁর চিন্তাধারায় যে আধ্যাত্মিকতার প্রভাব থাকবে, তাতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। তিনি ছিলেন একাধারে জ্ঞানযোগী, কর্মযোগী, ধ্যানযোগী এবং ভক্তিযোগী। এজন্য তাঁর চিন্তাধারায় জ্ঞান, কর্ম, ধ্যান এবং ভক্তি-এই চারটি বিষয়েরই সমন্বয় ঘটেছে। এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্মতা:  স্বামী বিবেকানন্দ যে বেদান্তের ভাবধারায় প্রভাবিত তাতে কোনো সন্দেহই নেই। সেকারণেই বলা যায় যে, বেদান্তের আলোকে বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা প্রতিফলিত। স্বামী বিবেকানন্দ বেদান্তের অদ্বৈতবাদের ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছেন। বেদান্তের ধ্যানধারণাকে কীভাবে আমাদের ব্যাবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে হয় তার শিক্ষা তিনি আমাদের দিয়েছেন। তিনি মনে করেন যে, বেদান্তের দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ এবং বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ প্রভৃতি হল আধ্যাত্মিক সাধনার তিনটি স্তর। তত্ত্বমসি (তুমি অর্থাৎ জীবই সেই ব্রহ্ম) অথবা 'অহংব্রহ্মাস্মি' (আমিই ব্রহ্মস্বরূপ)-এরূপ উপনিষদীয় মহাবাক্যগুলিই হল আমাদের আধ্যাত্মিক উপলব্ধির মূল ও শেষ কথা। সুতরা

বিবেকানন্দের মতে সত্য ও ঈশ্বর কী?

 বিবেকানন্দের মতে সত্য ও ঈশ্বর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে সত্য (reality) এবং ঈশ্বরকে (God) এক বলা হয় না। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের দর্শনে এই দুটি ধারণা পৃথকরূপে গণ্য নয়। এই দুটি ধারণাকে তিনি একই অর্থে প্রয়োগ করেছেন। সত্য ও ঈশ্বরের অযৌক্তিক পার্থক্য:  দর্শনগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রথাসিদ্ধ ধারণায় সত্যকে ব্যাখ্যা করা হয় এক প্রকার পরাবিদ্যাগত ধারণা হিসেবে। অপরদিকে, ঈশ্বরকে উল্লেখ করা হয় এক সর্বোচ্চ ধর্মীয় ধারণা হিসেবে। কিন্তু, স্বামী বিবেকানন্দ এরূপ প্রথাসিদ্ধ বিভাজনকে অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিকরূপে উল্লেখ করেছেন। অদ্বিতীয় রূপে ঈশ্বর:  বিবেকানন্দের দার্শনিক চিন্তাধারা অদ্বৈত বেদান্তের চিন্তাধারায় স্নাত। এরূপ চিন্তাধারায় স্নাত হয়ে তিনি বলেন যে, সত্য হল চরমব্রহ্ম। তিনি বলেন যে, সত্য হল এক, কিন্তু কখনোই সমগ্র নয়। কারণ, সমগ্রের ধারণাটি নির্দেশ করে যে, সমগ্রের কয়েকটি অংশ থাকে। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ যাকে পরমব্রহ্ম (absolute) বা অসীম (infinite)- রূপে উল্লেখ করেছেন তা হল এক পরিপূর্ণ একত্বস্বরূপ। এখানে তাই অংশ ও সমগ্রের বিভাজন রেখা লুপ্ত হয়েছে এবং এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর সূচিত হয়েছে। এরূপ এক ও অদ্বিতীয় ঈ

রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি উল্লেখ করো এবং বিশ্লেষণ করো।

Image
 রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসমূহ রবীন্দ্রনাথের দর্শনকে মূলত মানবতাবাদী দর্শনরূপে উল্লেখ করা হয়। কারণ, রবীন্দ্রনাথ প্রদত্ত দর্শনে মানবতাবাদের বিষয়টিই দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মতে এই মানবতাবাদের বিষয়টি বিভিন্ন উৎস থেকে হাজির হয়েছে। মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি এখানে উল্লেখ ও ব্যাখ্যা করা হল- মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎস হিসেবে অদ্বৈত বেদান্ত: মানবতাবাদের মূল কথাই হল জীবরূপে সকল মানুষের ওপরই গুরুত্ব দেওয়া, সকল মানুষকেই ভালবাসা। মানুষের সামগ্রিক মঙ্গল চিন্তা তাই মানবতাবাদ থেকেই নিঃসৃত। রবীন্দ্রনাথ অদ্বৈত বেদান্তের ভাবধারায় এক ও অদ্বিতীয় ব্রন্থের প্রকাশ হিসেবে মানুষের ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। মানুষের অস্তিত্ব ও মর্যাদা তাই তাঁর কাছে সবার ঊর্ধ্বে। অদ্বৈত বেদান্তের মূলকথাই হল-জীব ব্রহ্মস্বরূপ। সেকারণেই তিনি যেখানেই মানুষ ও মনুষ্যত্বের অবমাননা দেখেছেন, সেখানেই তিনি প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন।  মানবতাবাদী দর্শনের উৎসে ধর্মীয় ভিত্তি: মানুষের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ধর্মের বিষয়টি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এমন কোনো মনুষ্যসমাজ সমাজ দেখা যায় না, য

বিবেকানন্দের মতে মুক্তি কী?

 বিবেকানন্দের মতে মুক্তি নব্য বেদান্তিক দার্শনিকরূপে বিবেকানন্দ মুক্তির বিষয়টিকে স্বীকার করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের মতে মুক্তি কী তা প্রদত্ত আলোচনার মাধ্যমে উল্লেখ করা যায়- সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার মাধ্যমে মুক্তি:  একজন প্রকৃত বৈদান্তিক দার্শনিকের মতো বিবেকানন্দও মুক্তির বিষয়টিকে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন যে, মনুষ্যজাতির চরম লক্ষ্য হল মুক্তি লাভ করা। তার মতে, মুক্তি লাভ করার উপায় হল এই ক্ষুদ্র জীবন, এই ক্ষুদ্র জগৎ, এই পৃথিবী, এই স্বর্গ, এই শরীর এবং যা কিছু সীমাবদ্ধ তার সব কিছুকেই ত্যাগ করা। যখনই আমরা ইন্দ্রিয় ও মনের দ্বারা সীমাবদ্ধ এই ক্ষুদ্র জগৎ ত্যাগ করতে পারি, তখনই আমরা মুক্ত হই। বন্ধনমুক্ত হওয়ার একমাত্র উপায় হল সমস্ত নিয়মের বাইরে যাওয়া তথা ব্যাবহারিক কার্যকারণ শৃঙ্খলের বাইরে যাওয়া। অর্থাৎ, জাগতিক সমস্ত বিষয়েরই আসক্তি ত্যাগ করতে হবে। প্রবৃত্তিমার্গ এবং নিবৃত্তিমার্গ-এর মাধ্যমে মুক্তি : জগতের আসক্তি ত্যাগ করা অত্যন্ত কঠিন। অত্যন্ত কম লোকই এই আসক্তি ত্যাগ করতে পারে। আসক্তি ত্যাগের দুটি উপায় উল্লিখিত হয়েছে। এর একটি হল নিবৃত্তিমার্গ এবং অপরটি হল প্রবৃত্তিমার্গ। নিবৃত্তিমার্গে নেতি,

স্বামী বিবেকানন্দকে অনুসরণ করে কর্মযোগের আদর্শটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Image
স্বামী বিবেকানন্দকে অনুসরণ করে কর্মযোগের আদর্শ  স্বামী বিবেকানন্দ 1896 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর 'কর্মযোগ' গ্রন্থে কর্ম সম্বন্ধে বিশদে আলোচনা করেছেন। তিনি কর্মযোগের মাধ্যমেই আমাদের মুক্তিলাভের কথা বলেছেন। স্বামী বিবেকানন্দকে অনুসরণ করে কর্মযোগের আদর্শ [1] জীবনের চরম লক্ষ রূপে মুক্তি:  বেদান্তের মহানভাব এই যে, আমরা বিভিন্ন পথে সেই একই চরম লক্ষ্যে উপনীত হই। এই পথগুলি হল-কর্ম, ভক্তি, যোগ ও জ্ঞানের পথ। কিন্তু এ কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, এই সমস্ত পথ কখনোই বাঁধাধরা কিছু নয় এবং পৃথকও নয়। একটি অন্যগুলির সঙ্গে অত্যন্ত সহজেই মিশে যেতে পারে। এমন কোনো লোকই দেখা যায় না, যার কর্ম করার শক্তি ব্যতীত আর অন্য কিছু নেই। এমন কোনো ভক্ত নেই, যার ভক্তি ছাড়া আর কিছুই নেই। আবার এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার জ্ঞান ছাড়া আর কিছুই নেই। এই ধরনের বিভাগ কেবল মানুষের গুণ বা প্রবণতার প্রাধান্য অনুযায়ীই করা হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই চারটি পথ একই ভাবের অভিমুখে মিলিত হয়। এই চরম ভাবটি হল মানুষের মোক্ষ বা মুক্তি। [2] নিঃস্বার্থপরতা ও সৎকর্মের মাধ্যমে মুক্তি :  প্রত্যেকটি ধর্মেই মুক্তির জন্য প্রাণপণ চেষ্টার বিষয়টি আম

বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথের চিন্তার তুলনামূলক আলোচনা করো।

Image
 বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক চিন্তার তুলনা মূলক আলোচনা বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ উভয়েই অদ্বৈত বেদান্তের আধুনিক ব্যাখ্যাকর্তারূপে গণ্য। কারণ তারা উভয়েই অদ্বৈতের মূল বিষয়টি অনুসরণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা বেদান্তের মূল ভাবধারাটিকে নিজের নিজের মতো ব্যাখ্যা করে আমাদের কাছে উপস্থাপিত করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের দার্শনিক চিন্তনের একটি তুলনামূলক আলোচনায় আমরা অগ্রসর হতে পারি। বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথের চিন্তার তুলনামূলক আলোচনা করো।   বিবেকানন্দের দার্শনিক চিন্তন:  একজন প্রকৃত সন্ন্যাসী হয়েও বিবেকানন্দ তাঁর দার্শনিক চিন্তাধারার এক মৌলিক ও মননশীল তত্ত্ব আমাদের সামনে হাজির করেছেন। এর ফলে তিনি একজন বিশ্ববন্দিত সন্ন্যাসীরূপে সকলের সমাদর লাভ করেছেন। তিনি কর্মযোগের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতার যে ভাবটি আমাদের সামনে হাজির করেছেন, তা সকলেরই অনুকরণীয়। কর্মযোগের মাধ্যমেই বিবেকানন্দ তাঁর দার্শনিক ধ্যানধারণার বিষয়কে মানুষের সামনে উপস্থাপিত করেছেন। কর্মের রহস্য, কর্মের আদর্শ জ্ঞাত হয়ে নিষ্কাম কর্মের মধ্য দিয়ে যে মানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধন করা যায়, তা তিনি তাঁর কর্মযোগে ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং বলা যায়

অনাসক্তিকে কেন পূর্ণ আত্মত্যাগ বলা হয়?

Image
অনাসক্তিকে পূর্ণ আত্মত্যাগ বলার কারণ বিবেকানন্দের কর্মযোগ অনুসারে অনাসক্তিই পূর্ণ আত্মত্যাগ রূপে গণ্য হয় এর কারণগুলি হল- কৃতকর্মের ফল অবশ্যম্ভাবী:  কর্মযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে আমাদের কৃতকর্ম কোনো ফল প্রসব না করে, কখনোই নষ্ট হতে পারে না পৃথিবীর কোনো শক্তিই কৃতকর্মের ফল রোধ করতে পারে না। সেকারণে কোনো অসৎ কর্ম করলে কর্মসম্পাদনকারী ব্যক্তিকে তার ফলভোগ করতেই হয়। কোনো শক্তিই তাতে বাধা দিতে পারে না। আবার শুভকর্মের ফলও যে মানুষকে ভোগ করতেই হয়, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। এক্ষেত্রেও কোনো শক্তিই বাধা হতে পারে না। অনাসক্তিকে কেন পূর্ণ আত্মত্যাগ বলা হয়? প্রত্যেকটি কর্মেরই শুভ-অশুভ ফল বিদ্যমান:  কর্মযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমাদের সমস্ত প্রকার সৎ-অসৎ কর্ম পরস্পরের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আমরা এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা টানতে পারি না। আবার কোনো কাজ সম্পূর্ণভাবে ভালো বা সৎ, আর কোনো কাজ সম্পূর্ণভাবে মন্দ বা অসৎ এ কথা আমরা বলতে পারি না। এমন কোনো কর্ম নেই, যা একই সঙ্গে শুভ-অশুভ, এই দু-প্রকার ফলই প্রসব করে না। আমরা যদি সৎকর্মগুলিকে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যায় যে, সেখানেও কোথাও-না- কোথাও ক

মানবপ্রকৃতিতে অসীম সত্তার দিকটি কী?

Image
মানবপ্রকৃতির অসীম সত্তার দিক রবীন্দ্রনাথের মতে মানব প্রকৃতির অসীম সত্তার দিকটিকে নিম্নোক্তভাবে উল্লেখ করা যায় - সসীমতার মধ্যেই অসীমতার অবস্থান: রবীন্দ্রনাথ তাঁর'মানুষের ধর্ম' নামক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, মানবপ্রকৃতিতে যেমন তার সসীম সত্তার দিকটি পরিলক্ষিত হয়, তেমনই তার অসীম সত্তার দিকটিও প্রতিফলিত হয়। মানুষ তার বুদ্ধিমত্তা, বিবেক, আবেগ-অনুরাগ, আকর্ষণ এবং আত্মপোলব্ধির মাধ্যমে অহরহ চেষ্টা করে চলেছে আপন সসীমতার বৃত্তের বাইরে যেতে। মানুষ প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে নিজেই মত্ত থাকলেও, এতে কিন্তু মানুষ কখনোই শেষপর্যন্ত সন্তোষ লাভ করতে পারে না। মানুষ চায় তার নিজের মত্ততার বাইরে বেরিয়ে এসে অসীমের স্বাদ পেতে। এর জন্য মানুষ সক্রিয়ভাবে সচেষ্ট থাকে। কোনো বাধাই মানুষের এই ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। তাই সে জানার আকুতি নিয়ে অজানাকে জানতে চায়, অচেনাকে চিনতে চায়। আর যা কিছুই অজানা, অচেনা বা অতীন্দ্রিয়, তা কখনোই মানুষের সীমাবদ্ধতার অন্তর্ভুক্ত নয়। তা হল তার সীমাবদ্ধতার বাইরে অসীমতার প্রকাশক। এই অসীম সত্তাকেই মানুষ উপলব্ধি করার চেষ্টা করে চলেছে অহরহ। অহংভাবের বিনাশকরূপে অসীম সত্তা: অসীমের প্