জার্মানি কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণের (১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ খ্রি.) পরিপ্রেক্ষিতে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি ৩ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের পক্ষে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অগ্রগতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নানা ঘটনার ঘনঘটার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে।
[1] পোল্যান্ড দখল : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাসের মধ্যে জার্মানি ও রাশিয়া পোল্যান্ড দখল করে নেয়। পশ্চিম পোল্যান্ডে জার্মানি এবং পূর্ব পোল্যান্ডে রাশিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
[2] রাশিয়ার অগ্রগতি : ইতিমধ্যে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও জার্মান আক্রমণের সম্ভাবনায় রাশিয়া আতঙ্কিত ছিল। এজন্য রাশিয়া নিজের নিরাপত্তা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে দ্রুত ফিনল্যান্ড, এস্টোনিয়া, লাৎভিয়া ও লিথুয়ানিয়া দখল করে নেয়।
[3] জার্মানির অগ্রগতি : জার্মানি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ডেনমার্ক ও নরওয়ে, মে মাসে বেলজিয়াম, হল্যান্ড ও লাক্সেমবার্গ এবং জুন মাসে ফ্রান্স দখল করে নেয়।
[4] ইংল্যান্ড আক্রমণ : জার্মানি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট ইংল্যান্ডের ওপর বিমান আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ইংল্যান্ডের বিমান-বিধ্বংসী কামান ও জঙ্গি বিমান পালটা আক্রমণ শুরু করলে অক্টোবর মাসের মধ্যে জার্মানির ২,৩৭৫টি বিমান ধ্বংস হয়।
[5] রাশিয়া আক্রমণ : ইংল্যান্ড দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর জার্মানি আগেকার রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি ভেঙে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে (২২ জুন) রাশিয়া আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জার্মানি রাশিয়ার তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে এবং লেনিনগ্র্যাড, স্ট্যালিনগ্র্যাড-সহ রাশিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে বিপর্যস্ত হয়ে ফিরে আসে।
[6] আমেরিকার যোগদান : জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে বোমা বর্ষণ করে ধ্বংস করে দিলে আমেরিকা বিপুল শক্তি নিয়ে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেয়।
[7] জাপানের অগ্রগতি : ইউরোপে তীব্র যুদ্ধ চলার সুযোগে অক্ষশক্তিভুক্ত জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও দূরপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রাধান্য বিস্তার করে এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা প্রভৃতি দেশের উপনিবেশগুলি দখল করে নেয়।
[৪] ইটালির আত্মসমর্পণ : অক্ষশক্তিভুক্ত ইটালি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে যুদ্ধে যোগ না দিলেও জার্মানির চমকপ্রদ সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার (১০ জুন, ১৯৪০ খ্রি.) পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়। কিন্তু আফ্রিকায় ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির কাছে ইটালি পর্যুদস্ত হয়। মিত্রশক্তি উত্তর ইটালিতে ঢুকে পড়লে শেষপর্যন্ত ইটালি আত্মসমর্পণ করে (৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩ খ্রি.)।
[9] জার্মানির আত্মসমর্পণ : মিত্রশক্তি ফ্রান্স পুনরুদ্ধার (১৯৪৪ খ্রি.) করে জার্মানির দিকে এগিয়ে চলে। তারা জার্মানিতে প্রবেশের পর রুশ লালাফৌজ জার্মানির রাজধানী বার্লিন দখল (২ মে, ১৯৪৫ খ্রি.) করে। ইতিমধ্যে হিটলার আত্মহত্যা করলে জার্মানি মিত্রবাহিনীর কাছে ৭ মে (১৯৪৫ খ্রি.) আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
[10] জাপানের আত্মসমর্পণ : আমেরিকা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা বর্ষণ করলে জাপানের মনোবল ভেঙে যায়। শেষপর্যন্ত জাপান ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।
মূল্যায়ন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পতনের পর জার্মান ভূখণ্ড আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। জার্মানির রাজধানী সমগ্র বার্লিন শহরটি বাশিয়ার অধিকৃত জার্মান ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত হলেও এই শহর উক্ত চারটি রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত করা হয়।
Rade more