স্বামী বিবেকানন্দকে অনুসরণ করে কর্মযোগের আদর্শ
স্বামী বিবেকানন্দ 1896 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর 'কর্মযোগ' গ্রন্থে কর্ম সম্বন্ধে বিশদে আলোচনা করেছেন। তিনি কর্মযোগের মাধ্যমেই আমাদের মুক্তিলাভের কথা বলেছেন।
স্বামী বিবেকানন্দকে অনুসরণ করে কর্মযোগের আদর্শ |
[1] জীবনের চরম লক্ষ রূপে মুক্তি:
[2] নিঃস্বার্থপরতা ও সৎকর্মের মাধ্যমে মুক্তি :
প্রত্যেকটি ধর্মেই মুক্তির জন্য প্রাণপণ চেষ্টার বিষয়টি আমরা লক্ষ করি। এ হল সমুদয় নীতি ও নিঃস্বার্থপরতার ভিত্তি। নিঃস্বার্থপরতার অর্থ হল আমি কেবলই আমার এই শরীর-এই ভাব থেকে মুক্ত হওয়া। মানুষ তখন অনন্তস্বরূপ হয়ে যায়। এই অনন্ত বিস্তৃতিই হল সকল ধর্মের, সকল নীতি শিক্ষার এবং দর্শনের মূল লক্ষ্য। নিঃস্বার্থ কর্ম দ্বারা মুক্তি লাভ করাই হল কর্মযোগ। সুতরাং প্রত্যেক স্বার্থপূর্ণ কার্যই আমাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছোনোর পথে বাধাস্বরূপ। আর নিঃস্বার্থভাবে কর্মই আমাদেরকে সেই লক্ষ্যে টেনে নিয়ে যায়। সেকারণেই স্বামী বিবেকানন্দ নৈতিকতার সংজ্ঞায় বলেছেন, যা স্বার্থশূন্য তা-ই নীতিসংগত, আর যা স্বার্থযুক্ত তা-ই নীতিবিরুদ্ধ। সুতরাং, কর্মযোগ হল নিঃস্বার্থপরতা ও সৎকর্ম দ্বারা মুক্তি লাভ করার এক নীতি ও প্রণালী।
[3] নিরন্তরভাবে নিষ্কাম কর্মসাধন:
কর্মযোগীর কোনো নির্দিষ্ট ধর্মমতে বিশ্বাস করার আবশ্যকতা নেই। তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী হন বা না-হন, তাতে কিছুই যায় আসে না। তাকে কোনো মতবাদের সাহায্য না নিয়েও, কেবলমাত্র কর্ম দ্বারা সমস্যার সমাধান করতে হয়। স্বামী বিবেকানন্দ তাই তাঁর কর্মযোগে বলেছেন যে, জগৎযন্ত্রের চক্র থেকে পালিয়ে না গিয়ে, এর ভিতরে থেকেই কর্মের রহস্য সম্বন্ধে শিক্ষা নিতে হবে। জগৎযন্ত্ররূপ চক্রের মধ্য দিয়েই আমাদের মুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে তাই একমাত্র উপায় হল অনাসক্ত হয়ে, সমুদয় কর্মের ফল ত্যাগ করে, নিষ্কামভাবে নিরন্তর কর্ম করা। আর এখানেই কর্মযোগের আদর্শটি নিহিত।
[4] প্রকৃত কর্মযোগীরূপে বুদ্ধদের:
বিবেকানন্দ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন বুদ্ধদেবের কথা, যিনি কর্মযোগের আদর্শকে কার্যে পরিণত করেছেন। বিবেকানন্দ বলেন যে, বুদ্ধ ব্যতীত জগতের অন্যান্য মহাপুরুষগণ বাহ্য প্রেরণার বশেই নিঃস্বার্থ কর্মে প্রবৃত্ত হয়েছেন। বহির্জগৎ থেকেই তাঁরা পুরস্কার আশা করেছেন। কিন্তু একমাত্র বুদ্ধদেবই অন্তরের প্রেরণা থেকে নিঃস্বার্থভাবে কর্ম করেছেন। তিনি ঈশ্বর বা আত্মতত্ত্বে মাথা ঘামাননি, তিনি শুধুমাত্র সকলকে সৎকর্ম করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, মানুষের সৎকর্মই মানুষকে মুক্তি দেবে। বুদ্ধদেব একজন দার্শনিক হয়েও, তুচ্ছতম ও নিম্নতম প্রাণীর জন্যও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। নিজের জন্য তিনি কিছুই দাবি করেননি। প্রকৃতপক্ষে তিনিই হলেন আদর্শ কর্মযোগী। বিবেকানন্দ তাই বলেন যে, অভিসন্ধি ছাড়া যিনি কর্ম করেন, তিনি একজন বুদ্ধদেবে পরিণত হন এবং কর্মযোগের প্রকৃত আদর্শকে বহন করেন। এরূপ ব্যক্তিই হলেন কর্মযোগের চরম আদর্শের দৃষ্টান্ত।
Social Plugin