কারণ
কারণ হল এমনই এক ঘটনা, যার জন্য অন্য কোনো একটি ঘটনা ঘটে। 'ক' যদি 'খ'-এর কারণ হয়, তবে 'ক' নামক ঘটনাটি 'খ' নামক ঘটনাকে ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বৃষ্টিপাত হল মাটি ভেজার কারণ, ধোঁয়া হল আগুনের কারণ ইত্যাদি।
কার্য
কারণ যা কিছু ঘটায়, তাকেই বলা হয় কার্য। অর্থাৎ, পার্থিব জগতে যা কিছুই ঘটে, তাকেই বলা হয় কার্য। 'ক' যদি 'খ'-কে ঘটায়, তাহলে 'খ' হল কার্য। যেমন-আমরা বলতে পারি যে, মাটি ভেজা বৃষ্টিপাতের কার্য, দহন হল আগুনের কার্য ইত্যাদি।
কারণ ও কার্যের সম্পর্কের ধরণ
কারণ ও কার্যের জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনার শুরুতেই যে প্রশ্ন ওঠে, তা হল, কারণ ও কার্যের সম্পর্কের জ্ঞান কি অভিজ্ঞতাপূর্ব না অভিজ্ঞতালব্ধ? এর উত্তরে বলা যায়, কারণ ও কার্য দুটি স্বতন্ত্র ঘটনারূপে গণ্য। এই ঘটনা দুটি কখনোই পারস্পরিকভাবে বিচ্ছিন্ন নয়। একটি ঘটনা আর-একটি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ, কারণ ও কার্য রূপ ঘটনা দুটির মধ্যে একপ্রকার সম্বন্ধ বিদ্যমান। কিন্তু এদের সম্পর্ক অভিজ্ঞতাপূর্ব (A-Priori) না অভিজ্ঞতালব্ধ (A-Posteriori), সে সম্পর্কে দার্শনিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। আর এরূপ মতভেদের জন্য কার্য ও কারণের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে পাশ্চাত্য দর্শনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই বিতর্কের প্রথম ধারণাটি হল বুদ্ধিবাদীদের। তাঁদের মতে, কার্যকারণ সম্পর্কটি হল অভিজ্ঞতাপূর্ব। আর দ্বিতীয় ধারণাটি হল অভিজ্ঞতাবাদীদের। তাঁদের মতে, এরূপ সম্পর্কটি হল অভিজ্ঞতালব্ধ।
বুদ্ধিবাদীদের মত:
বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ দাবি করেন যে, কারণ ও কার্যের মধ্যে সম্বন্ধটি হল অভিজ্ঞতাপূর্ব। কারণ, এরূপ সম্বন্ধকে শুধু বুদ্ধির সাহায্যেই উপলব্ধি করা যায়, কখনোই অভিজ্ঞতার দ্বারা লাভ করা যায় না। আর যাকে অভিজ্ঞতায় পাওয়া সম্ভব নয়, তা অবশ্যই অভিজ্ঞতাপূর্বরূপে গণ্য হয়। বুদ্ধিবাদীরা আরও বলেন যে, কারণ ও কার্যের সম্বন্ধ কোনো সাধারণ সম্বন্ধ নয়। এ হল এক আবশ্যিক বা অনিবার্য সম্পর্ক। এই আবশ্যিক সম্বন্ধকে শুধু বুদ্ধির দ্বারাই অনুভব করা যায়। বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ এবং কান্ট কার্যকারণ সম্বন্ধকে তাই অভিজ্ঞতাপূর্ব বলেছেন।
অভিজ্ঞতাবাদীদের মত:
অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরা কিন্তু কার্যকারণ সম্বন্ধের মধ্যে অনিবার্যতার বিষয়টিকে স্বীকার করেন না। তাঁরা দাবি করেন যে, কার্যকারণ সম্বন্ধের ধারণা অভিজ্ঞতালব্ধ। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউম মনে করেন যে, অনিবার্যতার ধারণাটি হল একটি নিছক কাল্পনিক ধারণা মাত্র। কারণ, এরূপ সম্পর্কের ধারণাটির কোনো অভিমুদ্রণ নেই। আমরা শুধু কার্য ও কারণ ঘটনা দুটিকে বারবার পর্যবেক্ষণ করি। এভাবেই আমাদের মনে একপ্রকার প্রত্যাশা জাগে যে, একটিকে দেখলে আমরা অন্যটির কথাও ভাবি। অর্থাৎ, একটি ঘটলে অপরটিও ঘটবে- এরূপ একটা আশা বা মানসিক প্রবণতার সৃষ্টি হয়। এই পূর্বাপর ঘটনা দুটিকে আমরা শুধু অভিজ্ঞতায় লাভ করি বলে কার্যকারণের সম্বন্ধ হল অভিজ্ঞতালব্ধ।