লকের মুখ্য ও গৌণ গুণের পার্থক্য বার্কলে দ্বারা খণ্ডন
প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক জন লক বস্তুর মুখ্য ও গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাঁর পরবর্তী অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক জর্জ বার্কলে মুখ্য ও গৌণ গুণের পার্থক্যটিকে অস্বীকার করেছেন। তিনি যে যুক্তিগুলির মাধ্যমে মুখ্য ও গৌণ গুণের পার্থক্যকে নস্যাৎ করেছেন। সেগুলি হল-
উভয় গুণই ইন্দ্রিয় সংবেদনলব্ধ: বার্কলে দাবি করেন যে, আমরা গৌণ গুণগুলিকে যেমন আমাদের ইন্দ্রিয় সংবেদনের সাহায্যে লাভ করতে পারি, তেমনই মুখ্য গুণগুলিকেও ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে লাভ করা যায়। অর্থাৎ, উভয়রই উৎস ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা প্রত্যক্ষ। সুতরাং যাদের মৌল উৎস একই, তাদের মধ্যে বিভাজন রেখা কখনোই গ্রাহ্য নয়। অর্থাৎ, মুখ্য ও গৌণ গুণের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
উভয় গুণই মনোগত: লকের মতে, বস্তুর বিস্তৃতি, আকার প্রভৃতি মুখ্য গুণগুলি বস্তুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু গৌণ গুণগুলি কখনোই বস্তুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয়। বার্কলে দাবি করেন যে, বস্তুর মুখ্য গুণগুলি অবস্থাভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। এর কারণ, বরফ গলে জলে পরিণত হলে তার আকারের পরিবর্তন ঘটে, আবার এর বিস্তৃতিরও পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং, গৌণ গুণগুলির মতো মুখ্য গুণগুলিও পরিবর্তনীয় ও মনোগতরূপে গণ্য।
উভয় গুণই বস্তুর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য: লক দাবি করেন যে, বস্তুর মুখ্য গুণগুলিকে বস্তু থেকে কখনোই বিচ্ছিন্ন করা যায় না। কিন্তু গৌণ গুণগুলিকে বস্তু থেকে অত্যন্ত সহজেই বিচ্ছিন্ন করা যায়। অন্যদিকে, বার্কলে দাবি করেন যে, মুখ্য গুণগুলির মতো গৌণ গুণগুলিকেও বস্তু থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। কারণ, রংহীন, আকারহীন বস্তুর চিন্তা করা একেবারেই সম্ভব নয়। মুখ্য ও গৌণ গুণের মধ্যে সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সুতরাং উভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্যই নেই।
উভয় গুণই জ্ঞাতার ধারণায় প্রতিফলিত: লক দাবি করেন যে, মুখ্য ও গৌণ-উভয়প্রকার গুণের জ্ঞানই ব্যক্তির ধারণায় প্রতিফলিত। অর্থাৎ, এই উভয়প্রকার গুণ মিলেই বস্তুর ধারণা গঠিত হয়। অন্যদিকে, বার্কলে দাবি করেন যে, মুখ্য ও গৌণ গুণ-উভয় মিলে যদি বস্তুর ধারণা গঠন করে, তাহলে তাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? তাই মুখ্য ও গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়টি একেবারেই অবান্তর।
উভয়ই বিশেষণরূপে বস্তুতে আরোপিত: মুখ্য গুণগুলিকে যেমন বিশেষণরূপে বস্তুতে আরোপ করা যায়, তেমনই গৌণ গুণগুলিকেও বিশেষণরূপে বস্তুতে আরোপ করা যায়। চতুষ্কোণ টেবিলের মুখ্য গুণ তথা তার আকার উল্লেখ করে আমরা বলতে পারি যে, টেবিলটি চতুষ্কোণ। আবার তার গৌণ গুণ আরোপ করে বলতে পারি যে, টেবিলটি বাদামি। সুতরাং, গুণ আরোপের দিক থেকে মুখ্য ও গৌণ গুণের কোনো পার্থক্য নেই।