প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা (Needs for Conservation of Natural Resources):
মানুষের অবিবেচনামূলক কাজকর্মের ফলে গচ্ছিত সম্পদের ভান্ডার ক্রমাগত নিঃশেষিত হয়ে পড়ছে। দ্রুত হারে সম্পদ ধ্বংসের ফলে ক্রমশ মানব সভ্যতার অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে। বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজনীয়তা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও চাহিদা পরিপূরণের উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের অন্যতম প্রয়োজনীয়তাগুলি হল-
(i) ভবিষ্যৎ-এর জন্য সম্পদ সংরক্ষণ: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পরিপূরণের জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষত গচ্ছিত সম্পদ সংরক্ষণ করা দরকার। (ii) বর্তমানের চাহিদা পূরণ: গচ্ছিত সম্পদগুলির ভাণ্ডার ক্রমশ নিঃশেষিত হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণের জন্য উক্ত সম্পদগুলির সংরক্ষণ প্রয়োজন।
(iii) পরিবেশের স্থিতিশীলতা বজায়: নির্বিচারে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের ফলে জীবজগতের অস্তিত্ব তথা পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। তাই পরিবেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
(iv) পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ: ক্রমাগত কয়লা ও খনিজতেলের ব্যবহারের ফলে বায়ু, জল ও মৃত্তিকা দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্পদ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
(V) উৎপাদনশীলতা বজায়: বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে (যেমন-কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতি) উৎপাদনশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করা আবশ্যক।
(Vi) প্রবহমান সম্পদ সংরক্ষণ : প্রবহমান সম্পদগুলিও (যেমন-মাটি, জল প্রভৃতি) মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে অবক্ষয়িত হয়ে পড়তে পারে। তাই এই সম্পদগুলির জোগান অব্যাহত রাখার জন্য এগুলির সংরক্ষণ প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি (Different Methods of Conservation of Natural Resources):
প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলি হল-
(1) সম্পদের অপচয় প্রতিরোধ: সম্পদের অপচয় নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিমিত মাত্রায় সম্পদ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
(2) পুনর্ভব সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধি: গচ্ছিত সম্পদ সংরক্ষণের জন্য পুনর্ভব সম্পদের ব্যবহারের মাত্রা
বৃদ্ধি করতে হবে।
(3) উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে ভারসাম্য বজায়: কোনো উৎপাদনের পরিমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে সম্পদটির ভোগের মাত্রা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
(4) সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত কৌশলের সহায়তায় সম্পদের কার্যকারিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বল্প পরিমাণ সম্পদ ব্যবহার করে বেশি পরিমাণে চাহিদা পরিপূরণ করতে হবে।
(5) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহার: অগ্রাধিকার অনুসারে সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যেমন-বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কয়লা, খনিজ তেল ব্যবহারের পরিবর্তে সৌরশক্তির ব্যবহার।
(6) সম্পদের পুনর্ব্যবহার ও পুনরাবর্তন: গচ্ছিত সম্পদ, যেমন-তামা, লোহা প্রভৃতির পুনর্ব্যবহার ও পুনরাবর্তন করা সম্ভব হলে সম্পদ সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
(7) সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োগ: সঠিক ও যুক্তিসংগত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সম্পদ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যেমন-যে অঞ্চলে কয়লার ঘাটতি রয়েছে, সেখানে অবশিষ্ট কয়লা উত্তোলনের পরিবর্তে বিকল্প শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি।
(8) যুক্তিসংগত ব্যবহার: সম্পদের যুক্তিসংগত ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ সংরক্ষণ করা যায়। যেমন-স্বল্প মাত্রায় পরিকল্পনা অনুসারে গচ্ছিত সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহার।
(9) দুর্ঘটনা প্রতিরোধ: গচ্ছিত সম্পদ আহরণের সময় (যেমন-কয়লা খনিতে ধস) অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার ফলে যাতে সম্পদ নষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। (১০) জনসচেতনতার প্রসার: সম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।