সম্মেতু
অনুমানের ক্ষেত্রে হেতুর যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহই নেই। কারণ, হেতুর উপস্থিতি ছাড়া অনুমান কখনোই সম্ভব নয়। হেতুই সাধ্যকে পক্ষে প্রমাণ করতে সাহায্য করে। সেকারণেই হেতুকে সৎ তথা যথার্থরূপে গণ্য হতে হয়। যে হেতু সৎ বা যথার্থরূপে গণ্য সেই হেতুকেই বলা হয় সদ্ধেতু। হেতু যদি যথার্থ বা সৎ না হয়, তাহলে অনুমিতির ক্ষেত্রে বিভিন্নরকম দোষের উদ্ভব হয়। এই সমস্ত দোষ পরিহার করার জন্যই সদ্ধেতুর লক্ষণ একান্তভাবে জানা দরকার।
সদ্ধেতুর লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য
ন্যায়দর্শনে যে হেতু সরূপে গণ্য, তার পাঁচটি লক্ষণের উল্লেখ করা হয়েছে। সদ্ধেতুর এই লক্ষণগুলি হল-
[1] পক্ষসত্ব: পক্ষসত্ত্বের অর্থ হল পক্ষে হেতুর অবস্থান। পক্ষে যদি হেতু না থাকে, তাহলে সেখানে সাধ্যের অস্তিত্ব প্রমাণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, পক্ষ তথা পর্বতে যদি হেতু তথা ধোঁয়ার অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে সেখানে আগুন তথা সাধ্যের প্রমাণ করার প্রয়োজনই নেই। সুতরাং, পক্ষে হেতুর অবস্থান প্রয়োজন এবং একেই বলা হয় পক্ষধর্মতা বা পক্ষসত্ত্ব।
[2] সপক্ষসত্ত্ব: এর অর্থ হল-যে-সমস্ত সদর্থক দৃষ্টান্তে সাধ্য উপস্থিত থাকে, সেই সমস্ত দৃষ্টান্তে হেতুটিও উপস্থিত থাকবে। যে যে স্থানে সাধ্যের অস্তিত্ব আছে বলে জানা থাকে, তাকেই বলা হয় সপক্ষ। দূরের পাহাড়, রান্নাঘর, যজ্ঞবেদি-এ সমস্তই হল সপক্ষ। এগুলিতে হেতুর বা ঘুমের অবস্থানকেই বলা হয় সপক্ষসত্ত্ব।
[3] বিপক্ষাসত্ব: সপক্ষে হেতুর অবস্থানকে যেমন পক্ষসত্ত্বরূপে অভিহিত করা হয়, তেমনই বিপক্ষে হেতুর অবস্থান না থাকাটাই হল বিপক্ষাসত্ত্ব। সাধ্যটি যে-সমস্ত স্থানে নেই বলে আমাদের জানা আছে, সেগুলিকেই বলা হয় বিপক্ষ। যেমন-হ্রদ, নদী, সমুদ্র প্রভৃতি হল বিপক্ষ। এই সমস্ত বিপক্ষে হেতু তথা ধোঁয়া কখনোই থাকবে না।
[4] অবাধিত: পক্ষে যদি সাধ্যের অনস্তিত্বকে প্রমাণ করা যায়, তাহলে যে হেতুর মাধ্যমে পক্ষে সাধ্যের অস্তিত্ব অনুমিত হয়, তা বাধিত হবে। অর্থাৎ, হেতুটি বাধাপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু হেতুকে কখনোই সাধ্যকে পক্ষে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে বাধা পেলে চলবে না। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, যদি বলা হয় অগ্নি শীতল-তাহলে হেতু তথা ধোঁয়া কখনোই অগ্নির অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে পারে না। সে কারণেই হেতুকে সবসময় অবাধিতরূপে গণ্য হতে হবে। হেতুর অবাধিত রূপে গণ্য হওয়ার গুণকেই বলা হয় অবাধিতত্ত্ব।
[5] অসৎ প্রতিপক্ষত্ব: কোনো প্রতিপক্ষ দৃষ্টান্ত না থাকাই হল অসৎ প্রতিপক্ষত্ব। কোনো হেতুর অন্য কোনো বিরোধী হেতু থাকলে তাকেই বলা হয় ওই হেতুর প্রতিপক্ষ হেতু। এরূপ প্রতিপক্ষ হেতু থাকলে, আলোচ্য হেতুটি কখনোই সাধ্যকে পক্ষে প্রমাণ করতে পারে না। সেকারণেই যথার্থ হেতুর অসৎ প্রতিপক্ষত্ব ধর্ম থাকা বাঞ্ছনীয়। যেমন, ঘটে ঘটত্ব (ঘটের গুণ) থাকাই বাঞ্ছনীয়, ঘটে পটত্ব (বস্ত্রের গুণ) থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।