সাম্রাজ্যবাদ
'সাম্রাজ্যবাদ' বলতে একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার সাহায্যে একটি শক্তিশালী দেশ নিজের স্বার্থে অন্য কোনো দুর্বল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে, তার ওপর প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব স্থাপন করে ও দেশটিকে নিজের দখলে আনার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশটি অধীনস্থ দুর্বল দেশের জনগণ, সম্পদ-সবকিছুই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকা
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই অস্ট্রিয়া সার্বিয়া আক্রমণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী কারণগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল সাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা। অনেক ঐতিহাসিকগণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী (১৮৭০ খ্রি.) সময় থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে 'সাম্রাজ্যবাদের যুগ' বলে চিহ্নিত করেছেন। মার্কসবাদী ঐতিহাসিকগণ এও বলে থাকেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী ঔপনিবেশিক ও অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ।
[1] ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে ইউরোপীয়রা মনে করত একমাত্র সাম্রাজ্য বিস্তারই দেশের গর্বের বিষয়। আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্স। পরবর্তীতে এদের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব পোষণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রস্তুত হয়।
[2 ] ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা : পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে অর্থাৎ ভৌগোলিক আবিষ্কারের পর থেকেই ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে শিল্পবিপ্লবের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলি (বিশেষত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি) দুর্বল দেশগুলিতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজ দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ফলস্বরূপ ইউরোপের দেশগুলি এশিয়া ও আফ্রিকায় সাম্রাজ্য দখলে আগ্রহী হয়ে পড়ে।
[ 3] জার্মানির সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ: ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর বিসমার্ক বলেন জার্মানি একটি 'পরিতৃপ্ত দেশ'। কিন্তু তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদী শাসক কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম এই মতবাদকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন-'জার্মানি পরিতৃপ্ত দেশ নয়, তার সামনে অনন্ত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা আছে'। ফলে জার্মানি পুনরায় সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রচেষ্টা শুরু করলে ব্রিটেন ভীত হয়ে পড়ে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে।
[4] জার্মানির সামরিক শক্তি বৃদ্ধি: সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে জার্মানি সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। তাদের এই শক্তিবৃদ্ধি ইউরোপে সামরিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে ইন্ধন দেয়।
মূল্যায়ন: মানবসভ্যতার প্রথম বৃহত্তম যুদ্ধ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং বহু ক্ষয়ক্ষতি ও সম্পদহানি ঘটে।