ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে ইটালি বিভিন্ন ছোটোবড়ো রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া ছাড়া ইটালির সব রাজ্যেই অস্ট্রিয়া-সহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।
ইটালির ঐক্য আন্দোলনে কাউন্ট ক্যাডুরের ভূমিকা
বিদেশি শক্তিগুলিকে বিতাড়িত করে বহুধা বিভক্ত ইটালির ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাঁরা অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাউন্ট ক্যামিলো বেনসো ডি ক্যাভুর (১৮১০-১৮৬১ খ্রি.)।
[1] মতাদর্শ:
[i] বিদেশি সাহায্য গ্রহণ: বাস্তববাদী ক্যাভুর উপলব্ধি করেন যে, বৈদেশিক শক্তির সাহায্য ছাড়া অস্ট্রিয়ার মতো প্রবল শক্তিকে ইটালি থেকে বিতাড়িত করা যাবে না।
[ii] স্যাভয় বংশের নেতৃত্ব: ক্যাভুর পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার স্যাভয় রাজবংশের অধীনে ইটালিকে ঐক্যবদ্ধ করার নীতি গ্রহণ করেন।
[iii] পিডমন্টের শক্তিবৃদ্ধি: পিডমন্টের শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
[2] বিদেশি সাহায্য:
[i] ইঙ্গ-ফরাসি শক্তিকে সহায়তা: অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশি শক্তির সাহায্য লাভের উদ্দেশ্যে ক্যাভুর ক্রিমিয়ার যুদ্ধে (১৮৫৫-১৮৫৬ খ্রি.) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে সহায়তা করেন।
[ii] প্যারিসের বৈঠকে সুযোগ: যুদ্ধ-পরবর্তী প্যারিসের শান্তি বৈঠকে (১৮৫৬ খ্রি.) অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে ইটালি তার অভিযোগগুলি উত্থাপনের সুযোগ পায়।
[iii] গ্লোমবিয়ের্সের চুক্তি: ক্যাভুর ফ্রান্সের সঙ্গে প্লোমবিয়ের্সের গোপন চুক্তি (১৮৫৬ খ্রি.) স্বাক্ষর করে। এর দ্বারা ইটালির ঐক্য আন্দোলনে অস্ট্রিয়ার যুদ্ধে ফ্রান্স পিডমন্টকে সাহায্য দিতে রাজি হয়।
[3] অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ: ফ্রান্সের সঙ্গে গোপন সন্ধির পর ক্যাভুর
অস্ট্রিয়াকে নানাভাবে যুদ্ধের উস্কানি দিলে অস্ট্রিয়া পিডমন্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা (১৮৫৯ খ্রি.) করে। ফলে ফ্রান্সও পিডমন্টের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়ে অস্ট্রিয়াকে ম্যাজেন্টা ও সলফেরিনো-র যুদ্ধে পরাজিত করে এবং লম্বার্ডি দখল করে। কিন্তু ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন মাঝপথে যুদ্ধ বন্ধ করে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধি (১৮৫৯ খ্রি.) স্বাক্ষর করে। এই সন্ধির দ্বারা পিডমন্টের সঙ্গে লম্বার্ডি ও মিলান যুক্ত হয়।
[4] ক্ষোভ: ক্যাভুর ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধির বিরোধিতা করলেও পিডমন্টের রাজা ভিক্টর ইমান্যুয়েল উপলব্ধি করেন যে, ফ্রান্সের সহায়তা ছাড়া অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে জয় লাভ করা সম্ভব নয়। তাই তিনি যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়ে এই সন্ধি মেনে নেন এবং অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জুরিখের সন্ধি (১৮৫৯ খ্রি.) স্বাক্ষর করেন। এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ ক্যাভুর পদত্যাগ করেন।
[5] ফ্রান্সের সঙ্গে বোঝাপড়া: জুরিখের সন্ধির দ্বারা মধ্য ইটালির পার্মা, মডেনা, টাস্কানি, রোমানা প্রভৃতি রাজ্যগুলিতে পুরোনো বিদেশি শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। কিন্তু এখানকার জনগণ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। এতে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়া আপত্তি জানায়। দেশের এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে ক্যাভুর দেশের স্বার্থে আবার প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ (১৮৬০ খ্রি.) করেন। তিনি ফরাসি
সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের সঙ্গে এক বোঝাপড়া করেন। এর দ্বারা স্থির হয় যে- [i] ফ্রান্স মধ্য ইটালির ওই রাজ্যগুলির সংযুক্তিতে আপত্তি করবে না। [ii] ফ্রান্স এর বিনিময়ে ইটালির স্যাভয় ও নিস লাভ করবে।
মূল্যায়ন: গণভোটের (১৮৬০ খ্রি.) মাধ্যমে পিডমন্টের সঙ্গে মধ্য ইটালির রাজ্যগুলি যুক্ত হয়। তবে ক্যাভুর ইটালির স্যাভয় ও নিস ফ্রান্সকে প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলে ভিক্টর ইমান্যুয়েল এবং গ্যারিবল্ডি অসন্তুষ্ট হন। কেননা, পিডমন্টের রাজবংশের আদি নিবাস ছিল স্যাভয় এবং গ্যারিবল্ডির জন্মস্থান ছিল নিস। গ্যারিবন্ডি ক্যাভুরকে বলেন যে, "আপনি আমাকে নিজভূমে পরবাসী করে দিলেন।"