সন্নিকর্ষ
ন্যায়দর্শনে সন্নিকর্ষ শব্দটির অর্থ হল সংযোগ। সংযোগ হল ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয় বা অর্থের সংযোগ। যখন আমরা কোনো ঘট প্রত্যক্ষ করি, তখন সেই ঘট নামক বিষয়ের সঙ্গে চক্ষু নামক ইন্দ্রিয়ের সংযোগ হয়। এর ফলেই আমাদের ঘট-প্রত্যক্ষ সম্ভব হয়।
সন্নিকর্ষের প্রকারভেদ: ন্যায়দর্শনে সন্নিকর্ষ হল দু-প্রকার-
[1] লৌকিক এবং [2] অলৌকিক। ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের যদি সরাসরিভাবে সংযোগ হয়, তবে তাকেই বলা হয় লৌকিক সন্নিকর্ষ। যেমন-ঘট এবং চক্ষুর সংযোগ বা সন্নিকর্ষ। অপরদিকে, ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের যদি পরোক্ষ সংযোগ হয়, তবে তাকেই বলা হয় অলৌকিক সন্নিকর্ষ। যেমন-মানুষ প্রত্যক্ষ করে, মনুষ্যত্বের সঙ্গে সংযোগ বা সন্নিকর্ষ পরোক্ষভাবে সম্পন্ন করা যায়।
ন্যায়দর্শন স্বীকৃত লৌকিক সন্নিকর্ষ
ন্যায় মতে, লৌকিক সন্নিকর্ষ হল ছয়প্রকার। এগুলি হল-
[1] সংযোগ সন্নিকর্ষ: একটি দ্রব্যের সঙ্গে আর-একটি দ্রব্যের সংযোগকেই বলা হয় সংযোগ সন্নিকর্ষ। চক্ষুর দ্বারা ঘট দ্রব্যের প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে সংযোগ সন্নিকর্ষ হয়। কারণ, ঘটও একটি দ্রব্য, আর চক্ষুও একটি দ্রব্যরূপে গণ্য। সুতরাং, চক্ষু দ্রব্য ঘট দ্রব্য = সংযোগ সন্নিকর্ষ।
[2] সংযুক্ত-সমবায় সন্নিকর্ষ: ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে দ্রব্যের গুণের যে সংযোগ, তাকেই বলা হয় সংযুক্ত-সমবায় সন্নিকর্ষ। চক্ষুর সঙ্গে ঘটের সম্বন্ধ হল সংযোগ সম্বন্ধ। আবার ঘটের সঙ্গে ঘটরূপের সম্বন্ধ হল সমবায় সম্বন্ধ। সুতরাং, যৌথভাবে চক্ষুর সঙ্গে ঘটরূপের সম্বন্ধ হল সংযুক্ত-সমবায় সম্বন্ধ।
[3] সংযুক্ত-সমবেত-সমবায় সন্নিকর্ষ: ইন্দ্রিয়ের দ্বারা কোনো দ্রব্যের গুণ প্রত্যক্ষকালে সেই গুণে গুণত্বজাতি থাকে। সেই গুণত্বজাতির প্রত্যক্ষে যে সন্নিকর্ষ হয়, তাকেই বলা হয় সংযুক্ত-সমবেত-সমবায় সন্নিকর্ষ। ঘট প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ঘটের সঙ্গে চক্ষুর সংযোগ সন্নিকর্ষ হয়। আবার ঘটের সঙ্গে ঘটরূপের সমবায় সন্নিকর্ষ হয়। পুনরায় ঘটরূপের সঙ্গে রূপত্বজাতিরও সমবায় সন্নিকর্ষ হয়। ফলত, এক্ষেত্রে সংযুক্ত-সমবেত-সমবায় সন্নিকর্ষ সম্পন্ন হয়।
[4] সমবায় সন্নিকর্ষ: কর্ণেন্দ্রিয়ের দ্বারা শব্দ প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে সমবায় সন্নিকর্ষ সম্পন্ন হয়। কারণ, শব্দ হল ব্যোম বা আকাশের গুণ এবং কর্ণেন্দ্রিয় নিজেই আকাশরূপে গণ্য। গুণ ও গুণীর সম্বন্ধই হল সমবায় সন্নিকর্ষ।
[5] সমবেত-সমবায় সন্নিকর্ষ: শব্দের প্রত্যক্ষকালে ওই শব্দে আশ্রিত শব্দত্ব জাতিরও প্রত্যক্ষ হয়। কর্ণেন্দ্রিয়ের দ্বারা শব্দে শব্দত্ব জাতির প্রত্যক্ষে যে সন্নিকর্ষ হয়, তাকেই বলা হয় সমবেত-সমবায় সন্নিকর্ষ।
[6] বিশেষণ-বিশেষ্যভাব সন্নিকর্ষ: অভাব প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে যে সন্নিকর্ষ হয়, তাকে বলা হয় বিশেষণ-বিশেষ্যভাব সন্নিকর্ষ। ভূতলে ঘটাভাবের ক্ষেত্রে ভূতল হল বিশেষ্য, আর ঘটের অভাব হল বিশেষণ। বিশেষ্য তথা ভূতলে, বিশেষণ তথা ঘটাভাবের প্রত্যক্ষই হল বিশেষণ-
বিশেষ্যভাব সন্নিকর্ষ।