Editors Choice

3/recent/post-list

Search This Blog

উনিশ শতকে বলকান/পূর্বাঞ্চল/নিকট-প্রাচ্য সমস্যার উপাদানগুলি কী ছিল?

ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত ইজিয়ান সাগর ও ড্যানিয়ুব নদীর মধ্যবর্তী পার্বত্যভূমি বলকান অঞ্চল নামে পরিচিত। পঞ্চদশ শতকের শেষদিকে গ্রিস, বালগেরিয়া, মলডেভিয়া, রোমেনিয়া, সার্বিয়া প্রভৃতি ইউরোপীয় জাতিগুলির ওপর এশিয়ার অটোমান তুর্কিদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

বলকান সমস্যার উপাদান

বলকান সংকটের বিভিন্ন উপাদান ছিল। যেমন-

[1] তুর্কি সাম্রাজ্যের দুর্বলতা: অষ্টাদশ শতকের শেষদিক থেকে- [i] ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি আধুনিক সামরিক শক্তিতে সজ্জিত হয়ে উঠলেও তুরস্ক আধুনিক যুগের উপযুক্ত সামরিক শক্তি গড়ে তুলতে পারেনি। [ii] তুরস্কের বিখ্যাত জানিজারি সেনাবাহিনী বিদ্রোহ করলে সুলতান এই বাহিনী ভেঙে দেন। [iii] তুরস্ক মধ্যযুগীয় মোল্লাতন্ত্র ও ধর্মীয় গোঁড়ামিকে আঁকড়ে থাকায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ে। [iv] শাসকদের অযোগ্যতা, প্রাদেশিক শাসকদের ক্ষমতার লোভ, শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রভৃতির ফলে তুর্কি শাসন প্রায় ভেঙে পড়ে।

[2] রুশ আগ্রাসন: রুশ জার পিটার দ্য গ্রেট (১৭২১-১৭২৫খ্রি.) দুর্বল তুরস্কে আগ্রাসন চালিয়ে বরফমুক্ত কৃয়সাগরের উপকূল পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতি গ্রহণ করেন। এটি 'উয়জল নীতি' নামে পরিচিতি। রুশ জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন (১৭৬২-১৭৯৬ খ্রি.) তুরস্কে অভিযান চালিয়ে ইউক্রেন ও ক্রিমিয়া দখল করে নেন। ঊনবিংশ শতকেও রাশিয়া বলকান অঞ্চলে তার আগ্রাসন অব্যাহত রাখে।

[3] ইউরোপীয় শক্তিবর্গের ভূমিকা: বলকান অঞ্চলে রুশ আগ্রাসনে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশগুলি সন্দেহ করে যে, সেই অঞ্চলে তাদের আধিপত্য ও নিরাপত্তা নষ্ট হবে। এজন্য তারা তুরস্কে রুশ সম্প্রসারণে বাধা দিতে এগিয়ে আসে। ফলে বলকান সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। 

[4] বলকান জাতীয়তাবাদ: বলকান জাতিগুলি তুরস্কের অধীনতা ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভে উদ্‌গ্রীব হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আন্দোলন শুরু করে। রাশিয়া এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তুর্কি সাম্রাজ্য ধ্বংস করে সেই অঞ্চলে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়।

[5] ক্রিমিয়ার যুদ্ধ: বলকান সমস্যাকে কেন্দ্র করে তুরস্ক ও রাশিয়ার

মধ্যে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ (১৮৫৪-১৮৫৬ খ্রি.) শুরু হয়। তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া এই যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যোগ দেয়। যুদ্ধে রাশিয়া পরাজিত হয় এবং প্যারিসের সন্ধির (১৮৫৬ খ্রি.) দ্বারা যুদ্ধের অবসান ঘটে।

[6] রোমেনিয়ার জন্ম: প্যারিসের সন্ধির পরবর্তীকালে মলডেভিয়া ও

ওয়ালাকিয়া নামে তুরস্কের দুটি প্রদেশ স্বাধীনতার দাবি জানায়। এই দাবিকে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া সমর্থন করে। ফলে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রদেশ দুটি স্বাধীনতা লাভ করে এবং নতুন রোমেনিয়া রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।

[ 7] সানস্টেফানোর সন্ধি: ১৮৭০-এর দশকে তুরস্কের বিরুদ্ধে

বালগেরিয়ায় বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করলে তুর্কি সেনারা নির্মমভাবে বালগারদের হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড ও বলকান জাতির ওপর তুর্কিদের অত্যাচারের অজুহাতে রাশিয়া তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা (১৮৭৭ খ্রি.) করে। পরাজিত তুরস্ক সানস্টেফানোর সন্ধি (১৮৭৭ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। এই সন্ধির দ্বারা[i] তুরস্ক সার্বিয়া, রোমেনিয়া ও মন্টিনেগ্রোর স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়। [ii] স্বাধীন বালগেরিয়া রাষ্ট্র গঠিত হয়। [iii] রাশিয়াকে তুরস্ক বেশ কিছু স্থান ছেড়ে দেয় এবং ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়।

মূল্যায়ন: ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, জার্মানি প্রভৃতি রাষ্ট্র সানস্টেফানোর সন্ধির দ্বারা তুরস্কে রুশ আগ্রাসনের তীব্র বিরোধিতা করে। শেষপর্যন্ত তাদের চাপে রাশিয়া এই সন্ধির পুনর্বিবেচনায় রাজি হয়। এই উপলক্ষ্যে বিসমার্কের সভাপতিত্বে বার্লিন কংগ্রেসে বার্লিন চুক্তি (১৮৭৮ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়।

Post a Comment

0 Comments