জোয়ারভাটা শক্তি

জোয়ারভাটা শক্তির ধারণা: 


ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় শক্তির উৎসগুলির মধ্যে অন্যতম হল জোয়ারভাটা শক্তি। সূর্য ও চাঁদের আকর্ষণে মহাসাগর-সাগরের জল নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে কোনো স্থানে স্ফীত হয় এবং অন্যস্থানে নেমে যায়, যা যথাক্রমে জোয়ার ও ভাটা নামে পরিচিত। জোয়ারভাটার প্রবল গতিবেগসম্পন্ন জলপ্রবাহে টারবাইনের সাহায্যে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তাকে জোয়ারভাটা শক্তি বলে।

জোয়ারভাটা শক্তির উৎপাদন পদ্ধতি: 


খাঁড়ি বা নদীর মোহানা দিয়ে জোয়ারের সময় প্রবেশ করা জল ধরে রাখার জন্য নির্মিত বাঁধে যেসব সুইস গেট রয়েছে, তা দিয়ে জোয়ারের সময় যেমন জল নদীতে প্রবেশ করে, তেমনি ভাটার সময় সুইস গেটের মাধ্যমে জল ছাড়ার ফলে স্রোতের সৃষ্টি হয়। জোয়ারভাটার এই জলস্রোতেই টারবাইন ঘোরানোর ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

জোয়ারভাটা শক্তি-প্রধান উৎপাদক দেশসমূহ:


1966 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে লা রান্স খাঁড়িতে পৃথিবীর সর্বপ্রথম জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার আটলান্টিক মহাসাগর সংলগ্ন অঞ্চলে অধিকাংশ জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের অবস্থান লক্ষ করা যায়। প্রধান দেশগুলি হল-দক্ষিণ কোরিয়া (সিহা লেক-পৃথিবীর বৃহত্তম জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, উৎপাদন ক্ষমতা 254 মেগাওয়াট), ফ্রান্স, কানাডা, চিন, রাশিয়া, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য প্রভৃতি। 

জোয়ারভাটা শক্তি ভারত: 


ভারতের বিভিন্ন খাঁড়ি বা নদী মোহানায় জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে (আনুমানিক প্রায় 8500-9500 মেগাওয়াট)। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চল এবং গুজরাটের খাম্বাত উপসাগর ও কচ্ছু উপসাগর-এ যথাক্রমে প্রায় 1200, 7100 ও 1100 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গুজরাটের কচ্ছ উপকূলে প্রায় 915 মেগাওয়াট এবং পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের দুর্গাদুয়ানি নদী সংলগ্ন খাঁড়ি অঞ্চলে প্রায় 3.4 মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গঠনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে তামিলনাড়ুর চেন্নাই
উপকূলে একটি স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন জোয়ারভাটা শক্তি কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। 

জোয়ারভাটা শক্তির সুবিধা

(i) জোয়ারভাটা শক্তি একটি পুনর্ভব বা প্রবহমান শক্তি। (ii) এর পৌনঃপুনিক খরচ যথেষ্ট কম। (iii) যে-কোনো উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে খাঁড়ি বা নদীর মোহানা থাকলে সেখানেই শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়।

জোয়ারভাটা শক্তির সমস্যা

(i) এই শক্তিকেন্দ্র গঠনের প্রাথমিক ব্যয় অত্যন্ত বেশি হওয়ায় অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে এই কেন্দ্রগুলি গড়ে তোলা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। (ii) নদীর মোহানা বা খাঁড়ির অবস্থান না থাকলে এই শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব নয়। (iii) উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাব অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। (iv) জোয়ারের লবণাক্ত জলে জোয়ারভাটা শক্তি কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Popular posts from this blog

ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান আলোচনা করো।

কার্যকারণ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে হিউমের মতবাদটি আলোচনা করো।

নেপোলিয়নের পতনের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো।