Book Review: "Rich Dad Poor Dad" by Robert Kiyosaki

Affiliate Disclosure : This post contains affiliate links, which means we earn a commission if you purchase through these links. Thank you for supporting our site! Book Review: "Rich Dad Poor Dad" by Robert Kiyosaki A Financial Game-Changer for Entrepreneurs. Rating: 5/5 stars Introduction In the world of personal finance, few books have made as significant an impact as Rich Dad Poor Dad by Robert Kiyosaki. First published in 1997, this groundbreaking book offers insights into wealth-building that challenge conventional beliefs about money and education. If you're looking to reshape your financial future, this book might just be the catalyst you need. Overview of the Book Rich Dad Poor Dad contrasts the financial philosophies of Kiyosaki's two father figures: his biological father (the "Poor Dad"), who believed in traditional education and job security, and his best friend’s father (the "Rich Dad"), who advocated for financial literacy, investing

যুক্তিবিদ্যা বা তর্কবিদ্যার অর্থ, সংজ্ঞা, বিষয়, বিজ্ঞান, গুরুত্ব

যুক্তিবিদ্যা বা তর্কবিদ্যার প্রাথমিক ধারণা (Basic Concept of Logic)


যুক্তিবিদ্যা বা তর্কবিদ্যা হল একটি অত্যন্ত প্রাচীন শাস্ত্র। এটি দর্শনের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শাখা। অনেকে প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলকেই এই শাস্ত্রের জনকরূপে উল্লেখ করেন। স্বতন্ত্রভাবে প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিকেরাও অনুরূপ একটি শাস্ত্র গড়ে তোলেন। তাঁরা এই শাস্ত্রটিকে ন্যায়শাস্ত্র, যুক্তিশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত করেছেন। আধুনিককালে আমরা যুক্তিবিদ্যা, তর্কবিদ্যা, যুক্তিবিজ্ঞান, তর্কবিজ্ঞান প্রভৃতি শব্দগুলিকেই ব্যবহার করে থাকি। তবে, এ কথা সত্যি যে ভারতবর্ষে যেমন প্রাচীন ন্যায় সম্প্রদায়ের দার্শনিকরা এই শাস্ত্রের চর্চা করেছেন, তেমনি সুপ্রাচীন গ্রিসেও অ্যারিস্টটলের সময়কালেই এই শাস্ত্রটির সূত্রপাত ঘটে। সুতরাং, এই শাস্ত্রটি যে অত্যন্ত প্রাচীন- তাতে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না।

তর্কবিদ্যার আলোচনায় ওঠা প্রাথমিক প্রশ্ন (Elementary Questions Raised in the Discussion of Logic)


তর্কবিদ্যা বা যুক্তিবিদ্যা পাঠের প্রথমেই আমাদের মনে যে প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই জেগে ওঠে, তা হল-তর্কবিদ্যা বা যুক্তিবিদ্যা কী। অথবা যুক্তিবিদ্যার বিষয়বস্তু কী? সে কারণেই শাস্ত্রটির একটি সংজ্ঞা দেওয়ার প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে অসুবিধা হল এই যে, শাস্ত্রটির শুধুমাত্র একটি পরিচয় নেই, বিভিন্নভাবেই এর পরিচয় দেওয়া যেতে পারে। তবে যে অর্থে আমরা একে দর্শনশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করেছি, তা তর্কবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা প্রভৃতি নামকরণের মধ্যেই নিহীত রয়েছে। সেই অর্থ অনুযায়ী, তর্কবিদ্যা হল তর্ক ও যুক্তি সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও আলোচনা। অবশ্য এরূপ প্রশ্নের সহজ ও স্পষ্ট উত্তর পেতে গেলে আমাদের যুক্তিবিদ্যা বা তর্কবিদ্যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থটিকে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

তর্কবিদ্যা বা যুক্তিবিদ্যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ (Etymological Meaning of Logic)


যুক্তিবিজ্ঞান বা তর্কবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Logic। এই Logic শব্দটি গ্রিক Logike শব্দ থেকে উদ্বৃত। আবার Logike শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে লাতিন Logs শব্দ থেকে- যার অর্থ হল চিন্তা বা চিন্তার বাহন তথা ভাষা। এ থেকেই বোঝা যায় যে, চিন্তার সঙ্গে ভাষার এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। প্রকৃতপক্ষে বলা যায় যে, আমরা ভাষার মাধ্যমেই চিন্তাকে প্রকাশ করে থাকি। আবার চিন্তা (Thought) বলতে আমরা সাধারণভাবে সংবেদন, স্মৃতি, প্রত্যক্ষ, অনুভূতি, কল্পনা, সন্দেহ, যুক্তি প্রয়োগ, অনুমান প্রভৃতিকে বুঝিয়ে থাকি। এ হল চিন্তার ব্যাপকতম অর্থ। কিন্তু তর্কবিজ্ঞানে আমরা চিন্তা শব্দটিকে একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করে থাকি। চিন্তার এই বিশেষ অর্থটি হল-বিচার করা বা অনুমান করা। এই বিচার করা বা অনুমান করাকেই বলা হয় যুক্তি করা বা তর্ক করা (Reasoning)। তাই স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, তর্কবিজ্ঞান বা যুক্তিবিজ্ঞান হল চিন্তা বা যুক্তি সম্পর্কিত বিজ্ঞান (Logic is the science of Thought or Reasoning)।

তর্কবিদ্যার সংজ্ঞা (Definition of Logic)


তর্কবিদ্যা বা যুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রখ্যাত তর্কবিজ্ঞানী আই এম কোপি (I. M. Copi) তাঁর Introduction to Logic গ্রন্থে বলেছেন, "যে শাস্ত্র যথার্থ বা বৈধ যুক্তিকে অযথার্থ বা অবৈধ যুক্তি থেকে পৃথক করার জন্য কতকগুলো নিয়ম ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে, তাকেই বলে তর্কবিজ্ঞান বা যুক্তিবিজ্ঞান (Logic is the study of the methods and principles used to distinguish correct (good) from incorrect (bad) reasoning)


তর্কবিদ্যার আলোচ্য বিষয় (Subject Matter of Logic)

তর্কবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় হল তর্ক বা যুক্তি (Reasoning)। সেকারণেই তর্ক বা যুক্তির নিয়ম, স্বরূপ, প্রকারভেদ এবং নিয়মভঙ্গজনিত বিভিন্ন দোষ-এর বিষয়গুলিই হল তর্কবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। এ ছাড়াও, যেহেতু তর্কবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় হল যুক্তি, সেজন্য যুক্তির প্রকাশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, যেমন- বাক্য, বচন এবং পদ প্রভৃতির আলোচনাও তর্কবিদ্যার বিষয়সূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বচন, বচনের আকার, পদ এবং পদের গুরুত্ব প্রভৃতি বিষয়গুলিও স্বাভাবিকভাবেই তর্কবিদ্যার আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায়।

আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানরূপে তর্কবিদ্যা (Logic as a Normative Science)

তর্কবিদ্যার একটি সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, তর্কবিদ্যা হল একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। আমাদের মৌলিক আদর্শ হল তিনটি- সত্য, সুন্দর ও শিব বা কল্যাণ। এদের প্রত্যেকটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক-একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এগুলি হল-তর্কবিদ্যা (Logic), সৌন্দর্যবিদ্যা (Aesthetics) এবং নীতিবিদ্যা (Ethics) |

তর্কবিদ্যার কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় হল সত্য। কিন্তু সত্য কী? ভাষা হল ভাবের বাহন বা প্রকাশক। আবার এই ভাব গঠিত হয় অবধারণের মাধ্যমে। অবধারণ একধরনের মানসিক প্রক্রিয়া, যেখানে একাধিক বিষয়কে মনে মনে সংযুক্ত করা হয়। এই অবধারণ ভাষায় ব্যক্ত হলে তাকেই বলা হয় বচন। বচন সত্য ও মিথ্যা-দুইই হতে পারে। সত্য হল একটি বিমূর্ত ধারণা। অর্থাৎ, সত্য উপলব্ধির বিষয়-তা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। 'সত্য-মূল্য' (Truth-value) দিয়েই কোনো একটি বচন সত্য না মিথ্যা তা বোঝা যায়। সে-কারণেই বলা হয় বচনের সত্য-মূল্য দুটি-সত্য (Truth) ও মিথ্যা (False)।

চিন্তার মূলনীতিসমূহের বিজ্ঞান হিসেবে তর্কবিদ্যা (Logic as a Science of the Basic Principles of Thinking)

ডেভিড হিউম এবং ইমানুয়েল কান্ট প্রমুখ বিশিষ্ট দার্শনিকগণ তর্কবিদ্যাকে চিন্তার মূলনীতিসমূহের বিজ্ঞানরূপে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা সম্ভব হয় বুদ্ধি বা চিন্তার সাহায্যেই। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আলোচনা ও অনুসন্ধানের ক্ষেত্রগুলি আলাদা আলাদা হলেও, প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিন্তার একটি সুশৃঙ্খল ধারা বা মূলনীতি মেনে চলতে হয়। কেবলমাত্র এইভাবে চর্চা চালিয়ে গেলেই ওইসব শাখাকে এক-একটি বিজ্ঞানরূপে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়। চিন্তার এইসব মূলনীতি মেনেই বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষকরা কোনো সত্যে পৌঁছোতে পারেন। তর্কবিদ্যার কাজ হল চিন্তার সেই সমস্ত মূলনীতি, যেগুলি সম্পর্কে আমরা সাধারণভাবে অবহিত নই, সেগুলিকে একত্রিত করা এবং তাদের

সুস্পষ্টতা দান করা। এক্ষেত্রে অবশ্য চিন্তার মূলনীতি বলতে যুক্তির মূলনীতিকেও বোঝানো হয়।

যুক্তিবিদ্যা বা তর্কবিদ্যার গুরুত্ব (Importance of Logic)

তর্কবিদ্যা বা যুক্তিবিদ্যার গুরুত্ব উল্লেখ করতে গিয়ে ভারতীয় তর্কশাস্ত্রকার অন্নমভট্ট বলেছেন, তর্কবিদ্যা হল সকল শাস্ত্রের প্রদীপস্বরূপ ("প্রদীপঃ সর্বশাস্ত্রানাং")। একই কথা বলেছেন প্রখ্যাত পাশ্চাত্য দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট-ও। তাঁর মতে, যুক্তিবিদ্যা হল সকল বিজ্ঞানের প্রবেশদ্বার। এই যুক্তিবিজ্ঞানের ওপরই নির্ভর করে গড়ে উঠেছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমস্ত শাখা। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে তর্কবিদ্যার গুরুত্বকে কোনোমতেই অস্বীকার করা চলে না।

যুক্তি বা তর্কের ধারণা (Concept of Argument)

তর্কবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় হল যুক্তি। এখন প্রশ্ন হল যুক্তি বা তর্ক কী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের প্রথমেই অনুমান কাকে বলে, তা জানা দরকার। কারণ, অনুমানই হল যুক্তি বা তর্কের মূল ভিত্তি। কোনো জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত কোনো সত্য লাভ করার যে প্রক্রিয়া (Process), তাকেই বলা হয় অনুমান। এই অনুমানকে যখন ভাষায় ব্যক্ত করা হয়, তখন তাকেই বলা হয় যুক্তি বা তর্ক (Argument)। সুতরাং বলা যায় যে, যুক্তি বা তর্ক হল অনুমানকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একধরনের ভাষাগত কাঠামো, যেখানে এক বা একাধিক বাক্যের সত্যতা থেকে সিদ্ধান্ত বাক্যের সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা হয়।


যুক্তির বৈশিষ্ট্য (Features of Argument)


ভাষায় প্রকাশিত যে-কোনো অনুমানকেই যুক্তি বলা যায় না। যুক্তির কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে। এই সমস্ত
বৈশিষ্ট্যগুলির সাহায্যেই যুক্তিকে চিনে নেওয়া যায়। এগুলিকে নীচে উল্লেখ করা হল- 

1) একাধিক বচন বা বাক্য দ্বারা গঠিত: যুক্তি অবশ্যই একাধিক বচন বা বাক্য দ্বারা গঠিত হয়। অর্থাৎ, যুক্তি কখনোই একটি মাত্র বচন দ্বারা গঠিত হতে পারে না। একাধিক বচনের সম্মিলিত রূপেই যুক্তিকে গঠন করা যায়।

2) দুটি অংশ সমন্বিত: যুক্তির দুটি অংশ-হেতুবাক্য বা যুক্তিবাক্য এবং সিদ্ধান্ত। যে বাক্য বা বচনগুলির সাহায্যে আমরা একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হই, সেই বচন বা বচনগুলিকেই বলা হয় হেতুবাক্য (Premises)। আর এই সমস্ত হেতুবাক্যের সাহায্যে যে বাক্য বা বচনটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকেই বলা হয় সিদ্ধান্ত (Conclusion)। হেতুবাক্য এবং সিদ্ধান্তকে বলা হয় যুক্তির অবয়ব বা অংশ।

3) হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের অন্তঃস্থিত সম্বন্ধস্বরূপ: যুক্তি বা তর্ক হল হেতুবাক্য এবং সিদ্ধান্তের অন্তঃস্থিত এক সম্বন্ধস্বরূপ। হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই-এমন বচন দ্বারা কোনো যুক্তিই গঠন করা যায় না। অর্থাৎ, পারিপার্শ্বিকভাবে বিচ্ছিন্ন বাক্য বা বচন দিয়ে কোনো যুক্তিই গঠিত হতে পারে না।

যেমন- রাম হয় বুদ্ধিমান। টেবিল হয় কাষ্ঠনির্মিত বস্তু। পৃথিবী হয় গোল। 

এক্ষেত্রে বচন বা বাক্যগুলির সঙ্গে পারস্পরিকভাবে কোনো সংযোগ নেই বলেই এই ধরনের বচনগুলি দ্বারা কোনো যুক্তি (Argument) গঠন করা যায় না। কিন্তু অবয়ব বচন বাক্যগুলির মধ্যে যদি কোনো প্রকার সম্পর্ক থাকে, তাহলে সেগুলি দ্বারা যুক্তি গঠিত হতে পারে। 

যেমন- সকল মানুষ হয় মরণশীল।

রাম হয় মানুষ।

.. রাম হয় মরণশীল।


যুক্তির স্বরূপ বা প্রকৃতি (Nature of Argument)

1) জ্ঞানলাভের একটি প্রক্রিয়ারূপে যুক্তি বা অনুমান: 

যুক্তি অথবা অনুমান হল জ্ঞানলাভের একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া হল একটি যথার্থ বা সঠিক প্রক্রিয়া। এধরনের প্রক্রিয়া বাঁধাধরা নিয়মের অনুশাসন মেনে চলতে চায়। কোনো কারণে যদি নিয়ম মেনে চলা না হয়, তাহলে এই প্রক্রিয়া কখনোই সুফল দেয় না। তাই ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে যদি কোনো যুক্তি অথবা অনুমান গঠন করা হয়, তাহলে তা থেকে যথার্থ জ্ঞান পাওয়া যায়। কিন্তু নিয়মগুলিকে যথাযথভাবে না মানলে যুক্তি অথবা অনুমানের ক্ষেত্রে ভ্রান্তি দেখা দেয়। সেকারণেই যুক্তি অথবা অনুমানের নিয়মগুলি সম্পর্কে আমাদের যথাযথ ও সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার। তর্কবিদ্যা আমাদের সেই নিয়মগুলি সঠিকভাবে জানতে সাহায্য করে। সুতরাং তর্কবিদ্যার কাজ হল, সেই সমস্ত নিয়মের সন্ধান দেওয়া, যেগুলিকে অনুসরণ করলে যুক্তি বা অনুমান যথার্থ হয়।


2) যুক্তি বা তর্কের বিষয় কোনো মানসিক প্রক্রিয়া নয়:

 তর্কবিদ্যায় আমরা কোনো মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করি না। কারণ, মানসিক প্রক্রিয়া হল নেহাত-ই কোনো মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় এবং তা অপরের কাছে অপ্রকাশিত। সুতরাং শুধুমাত্র কোনো মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আবদ্ধ অনুমান হল একটি অস্পষ্ট বিষয়। কিন্তু ভাষায় প্রকাশিত যে অনুমান, তা অবশ্যই একটি স্পষ্ট বিষয়। তর্কবিদ্যা বা যুক্তিবিদ্যা হল ভাষায় প্রকাশিত অনুমান এবং এর চর্চার মধ্য দিয়ে কোনো বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভ করা যায়। সেই কারণেই তর্কবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হল যুক্তি (Argument), শুধুমাত্র মনে থেকে যাওয়া অনুমান নয়। তবে, তর্কবিদ্যার আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় যুক্তির পরিবর্তে অনুমান শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। সেক্ষেত্রে অনুমান এবং যুক্তি-এই শব্দ দুটি সাধারণভাবে সমার্থক শব্দরূপে গণ্য হয়। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই অনুমান বলতে কোনো মানসিক প্রক্রিয়াকে না বুঝিয়ে ভাষায় প্রকাশিত অনুমানকেই বোঝানো হয়।


3) বচনের সত্যমিথ্যা নির্ধারণের প্রক্রিয়ারূপে যুক্তি বা অনুমান: একটি বচনের সত্য-মূল্য হল দুটি- সত্য (True) অথবা মিথ্যা (False)। বচনের সত্যতা নির্ণীত হতে পারে নানা উপায়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি প্রত্যক্ষের সাহায্যেই বচনের সত্যতা নির্ণয় করা যায়। যেমন আমরা যদি বলি- "সরষে ফুলের রং হয় হলুদ", এই বচনের সত্যতাকে আমরা প্রত্যক্ষের মাধ্যমেই জানতে পারি। অনেক ক্ষেত্রে আবার একটি বচনের সত্যতা তার অন্তর্গত একাধিক বচনের সত্যতার দ্বারা নির্ণয় করা যায়। এই অন্তর্গত বচনগুলিকেই অংশ বচন বলা হয়। যেমন-"সক্রেটিস ছিলেন প্লেটোর শিক্ষক ও সক্রেটিস ছিলেন একজন গ্রিক"-এই বচনটির সত্যতা "সক্রেটিস ছিলেন প্লেটোর শিক্ষক" এবং "সক্রেটিস ছিলেন একজন গ্রিক"- এই দুটি অংশ বচনের সত্যতা থেকে জানা যায়। এক্ষেত্রে যেগুলিকে আমরা অংশ বচন-রূপে উল্লেখ করেছি- সেগুলি থেকে আমরা এও অনুমান করে নিতে পারি যে, "প্লেটোর শিক্ষক ছিলেন একজন গ্রিক"। এইভাবে বলা যায় যে, বচনের সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের প্রক্রিয়া হল অনুমান। আবার অনুমানের ভাষায় ব্যক্ত রূপকেই বলা হয় যুক্তি (Argument) |


4) যুক্তিবাক্য ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত বচনসমষ্টি হিসেবে যুক্তি বা তর্ক: যুক্তি বা তর্ক হল বচন সমষ্টির এমনই এক কাঠামো, যেখানে কমপক্ষে দুটি অথবা তার বেশি বাক্য বা বচন থাকে। এই সমস্ত বচনের মধ্যে শেষের বচনটিকে বলা হয় সিদ্ধান্ত (Conclusion) এবং বাকি বচন বা বচনগুলিকে বলা হয় যুক্তিবাক্য বা হেতুবাক্য

(Premises)। কোনো যুক্তি বা তর্কের ক্ষেত্রে বচনগুলির যুক্তিবাক্য এবং সিদ্ধান্তের মধ্যে অবশ্যই সম্পর্ক থাকে।


আমাদের সিদ্ধান্ত: যুক্তির সিদ্ধান্ত সত্য বা সম্ভাব্য যেভাবেই গণ্য হোক না কেন, এ কথা সত্য যে, কোনো যুক্তির সিদ্ধান্তটি অবশ্যই যুক্তিবাক্য বা আশ্রয়বাক্যের দ্বারা সমর্থিত। অর্থাৎ, যুক্তিবাক্যের অবশ্যই সিদ্ধান্তটিকে সমর্থন করার যোগ্যতা রয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, যুক্তি হল আশ্রয়বাক্যের সঙ্গে সিদ্ধান্তকে যুক্ত করার এক প্রক্রিয়া। সেকারণেই অনেক সময় বলা হয় যে, তর্কবিদ্যা বা যুক্তিবিদ্যা হল সিদ্ধান্ত নির্ণয়ের এক কৌশল (Logic is the art of drawing conclusions) |


5) বৈধ ও অবৈধ-রূপে যুক্তি: যে-কোনো যুক্তি বৈধ (Valid) হতে পারে, আবার তা অবৈধ (Invalid)-ও হতে পারে। যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি যদি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়, তবে যুক্তিটি বৈধ (Valid) হয়; আর তা যদি না হয়, তবে তা অবৈধ (Invalid)-রূপে গণ্য হয়।


6) যুক্তির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে সিদ্ধান্ত: যুক্তির ক্ষেত্রে আমরা অনুমানের বিষয়টিকে যে বচনের মাধ্যমে প্রমাণ করি, তাকেই বলা হয় সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তই হল যুক্তির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। যুক্তির ক্ষেত্রে আমরা সিদ্ধান্তটিকে সবার শেষে প্রতিষ্ঠা করি। সিদ্ধান্তের বক্তব্যই হল যুক্তির মূল বক্তব্য।


7) সিদ্ধান্তের সাহায্যকারী-রূপে হেতুবাক্য: যে সমস্ত বাক্য বা বচনের সাহায্যে আমরা সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠা করে থাকি, সেগুলিকে বলা হয় যুক্তিবাক্য বা হেতুবাক্য। যুক্তিবাক্য বা হেতুবাক্যের সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে, কিন্তু সিদ্ধান্তের সংখ্যা সর্বদা একটিই হয়। যুক্তিবাক্য বা হেতুবাক্যের সত্যতার ওপর সিদ্ধান্তের সত্যতা নির্ভর করে। অর্থাৎ, যুক্তিবাক্য বা হেতুবাক্য সত্য হলে সিদ্ধান্তটিও অনিবার্যভাবে সত্য।


যুক্তির বিভাগ (Classification of Arguments)


তর্কবিদ্যায় যুক্তিকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে- অবরোহ যুক্তি (Deductive Argument) এবং আরোহ যুক্তি (Inductive Argument) |


অবরোহ যুক্তি (Deductive Argument)


যে যুক্তিতে এক বা একাধিক যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়, অর্থাৎ যুক্তিবাক্যগুলি সত্য হলে সিদ্ধান্তটি কখনোই মিথ্যা হতে পারে না এবং সিদ্ধান্তটি কখনোই যুক্তিবাক্য অপেক্ষা ব্যাপকতর নয়, সেই যুক্তিকেই বলা হয় অবরোহ যুক্তি (Deductive Argument)। অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তগুলির বক্তব্য কখনোই যুক্তিবাক্যের বক্তব্যকে অতিক্রম করে যেতে পারে না। 


অবরোহ যুক্তির বৈশিষ্ট্য


অবরোহ যুক্তির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল- (1) অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তিবাক্যের সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে। (2) যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়। (3) সিদ্ধান্তে এমন কোনো বিষয় প্রমাণিত হতে পারে না, যা যুক্তিবাক্যের মধ্যে নিহিত নয়। (4) যুক্তিবাক্যের ব্যাপকতার চেয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপকতা কখনোই বেশি

হবে না। অর্থাৎ, তা যুক্তিবাক্যের ব্যাপকতার হয় সমান হবে, নয়তো তার চেয়ে কম হবে।

(5) অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আকারগত সত্যতার ওপরেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, বস্তুগত সত্যতার ওপর কোনো গুরুত্ব আরোপ করা হয় না। অর্থাৎ, বাস্তব ঘটনার সঙ্গে অবরোহ যুক্তির মিল থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। যুক্তির আকার কিন্তু এতে লঙ্ঘিত হয় না। (6) অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তের সত্যতা তার যুক্তিবাক্যের সত্যতা থেকে নিঃসৃত হয়। সেকারণেই দাবি করা যায় যে, যুক্তিবাক্যগুলি সত্য হলে সিদ্ধান্তটি কখনোই মিথ্যা হতে পারে না।

(7) অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি কখনোই যুক্তিবাক্যের বক্তব্যবিষয়কে অতিক্রম করতে পারে না। যুক্তিবাক্যের অপ্রমাণিত বিষয়কেই তা সিদ্ধান্তে প্রমাণ করে মাত্র। (8) সিদ্ধান্তের সত্যতাকে প্রমাণ করাই হল, অবরোহ যুক্তির মূল উদ্দেশ্য এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তির অপরাপর বিচার সম্ভব হয়। 


আরোহ যুক্তি (Inductive Argument)


যে যুক্তিতে একাধিক যুক্তিবাক্যের ওপর নির্ভর করে প্রকৃতির একরূপতা ও কার্যকারণ নিয়মের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য-সংশ্লেষক। (Universal Synthetic) বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকেই বলে আরোহ যুক্তি (Inductive Argument)। আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি সবসময়ই যুক্তিবাক্যের চেয়ে ব্যাপকতর হয় এবং কখনোই তা যুক্তিবাক্যগুলি থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত নয়। 


আরোহ যুক্তির বৈশিষ্ট্য


আরোহ যুক্তির সংজ্ঞাটিকে বিশ্লেষণ করলে তার কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল: (1) অবরোহ যুক্তির মতো আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটিও সর্বদা যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত হয়। অর্থাৎ, যুক্তিবাক্যই হল আরোহের সিদ্ধান্তের মূলভিত্তি। (2) আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি সবসময়ই একাধিক যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত হয়। অর্থাৎ, আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি কখনোই একটিমাত্র যুক্তিবাক্য থেকে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। (3) আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত হয় ঠিকই, কিন্তু তা কখনোই অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় না। অর্থাৎ, যুক্তিবাক্যগুলি সত্য হলেও, সিদ্ধান্তটি মিথ্যা হতে পারে। (4) আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি সর্বদা যুক্তিবাক্যের চেয়ে ব্যাপকতর হয়। অর্থাৎ, ব্যাপকতা বা বিস্তৃতির দিক থেকে তা সবসময়ই যুক্তিবাক্য অপেক্ষা বেশি। (5) আরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে আকারগত সত্যতার সঙ্গে সঙ্গে বস্তুগত সত্যতার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অর্থাৎ, বস্তুগত সত্যতার দিকটিও এক্ষেত্রে উপেক্ষিত নয়। (6) আরোহ যুক্তির মূল উদ্দেশ্য হল, বস্তুগত সত্য আবিষ্কারে সহায়তা করা।  


অবরোহ যুক্তি ও আরোহ যুক্তির সাদৃশ্য


অবরোহ এবং আরোহ যুক্তির মধ্যে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা গেলেও উভয়ের মধ্যে কিছু সাদৃশ্যও রয়েছে। অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তিবাক্যগুলিকে জ্ঞাত সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় এবং তা থেকেই সিদ্ধান্তে বা অজ্ঞাত সত্যে পৌঁছোনোর চেষ্টা করা হয়। একইভাবে, আরোহ যুক্তির ক্ষেত্রেও যুক্তিবাক্যগুলিকে জ্ঞাত সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় এবং সিদ্ধান্তে বা অজ্ঞাত সত্যে পৌঁছোনোর চেষ্টা করা হয়।


যুক্তির আকার (Argument Form)

প্রত্যেকটি যুক্তির দুটি রূপ লক্ষ করা যায়। যুক্তির এই দুটি রূপের একটি হল তার আকারগত দিক এবং অপরটি হল তার উপাদানগত দিক। যুক্তির উপাদান হল বচন (Proposition)। একাধিক বচনের সহযোগে কোনো একটি যুক্তি Argument) গঠিত হয়। যে-কোনো যুক্তির অন্তর্গত ওই সমস্ত বচনগুলিই হল যুক্তির উপাদান। আবার যুক্তির উপাদান বলতে যুক্তির বিষয়বস্তুকেও বোঝানো হয়ে থাকে। এই উপাদান দিয়ে গঠিত হয় যুক্তি। এই যুক্তিকে যখন একটি বিশেষ আকারে উপস্থিত করা হয়, তখন তাকে বলা হয় যুক্তির আকার (Argument Form)। 

যুক্তির বিভিন্ন আকার (Different Argument Forms)

যুক্তির আকার বলতে যে কাঠামোয় কোনো একটি যুক্তি গঠিত বা প্রকাশিত হয়, সেই কাঠামোকেই বোঝায়। অর্থাৎ, যে কৌশলে বা নিয়মে একাধিক বচন সংযুক্ত হয়ে একটি যুক্তি গঠন করে, সেই কৌশল বা নিয়মকেই বলা হয় যুক্তির আকার। কোনো একটি নির্দিষ্ট যুক্তির উপাদান পরিবর্তিত হলেও, তার আকার (Form) কিন্তু অপরিবর্তিত থাকে। একটি অবরোহ যুক্তি কেবলমাত্র সরল নিরপেক্ষ বচন নিয়ে গঠিত হতে পারে, আবার জটিল বচন সহযোগেও গঠিত হতে পারে।

সরল অবরোহ যুক্তির আকার

যদি একটি অবরোহ যুক্তিতে কেবলমাত্র সরল নিরপেক্ষ বচন থাকে, কোনো জটিল বচন (একাধিক সরল বচনের সংজ্ঞাত-রূপ) না থাকে, তাহলে যুক্তিটির অন্তর্গত প্রত্যেকটি সরল নিরপেক্ষ বচনের আকার পেলেই, যুক্তিটির আকার পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে বচনগুলিকে বিভিন্ন পদ (Term)-এ বিভক্ত করে প্রতিটি পদকে M.P.S ইত্যাদি বর্ণ দিয়ে চিহ্নিত করা হয় এবং পদগুলির পরিবর্তে ওই বর্ণগুলি ব্যবহার করা হয়। তবে একটি যুক্তিতে একই পদ একাধিকবার ব্যবহৃত হতে পারে। একটি যুক্তিতে কোনো একটি পদের পরিবর্তে যে বর্ণকে ব্যবহার করা হবে, পরে সবক্ষেত্রে ওই পদের পরিবর্তে ওই বর্ণটিকেই ব্যবহার করতে হবে।

জটিল অবরোহ যুক্তির আকার

যদি একটি অবরোহ যুক্তিতে অন্ততঃপক্ষে একটি জটিল বচন থাকে, তাহলে এরূপ যুক্তিটির আকার লাভের জন্য সরল বচনগুলিকে X, Y এবং Z ইত্যাদি বর্ণ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ ওই বচনগুলির পরিবর্তে X, Y, Z ইত্যাদি বর্ণকে ব্যবহার করতে হবে। 

যুক্তি থেকে যুক্তির আকার এবং যুক্তির আকার থেকে যুক্তি (Argument Form from Argument and Argument from Argument Form)

যে-কোনো অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে আমরা যেমন একটি যুক্তি (Argument) থেকে তার আকার (Argument Form)-কে পেয়ে থাকি, তেমনি তার আকার থেকেও যুক্তিটিকে পেতে পারি। যুক্তির আকার থেকে যুক্তিকে পেতে গেলে আমাদের প্রথমেই দেখতে হবে, যুক্তির আকারটিতে ঠিক কী ধরনের বচনের আকার ব্যবহৃত হয়েছে। যদি সরল বচনের আকার থাকে, তাহলে বচন আকারের অন্তঃস্থিত প্রতিটি বর্ণের পরিবর্তে তাদের মূল পদগুলিকে বসাতে হবে। কিন্তু যুক্তিটিতে জটিল বচনের আকার থাকলে ওই জটিল বচনের আকারের প্রতিটি বর্ণের পরিবর্তে তাদের নিজ নিজ সরল নিরপেক্ষ বচন বসাতে হবে।

যুক্তির বৈধতা (Validity of Arguments)


আমরা জানি যে, অনুমানকে যখন ভাষায় ব্যক্ত করা হয়, তখন তাকে বলা হয় যুক্তি। এই যুক্তি ঠিক বা শুদ্ধ হতে পারে, আবার তা অশুদ্ধ বা ভুলও হতে পারে। তর্কবিদ্যায় নির্ভুল বা শুদ্ধ যুক্তিকে বলা হয় বৈধ যুক্তি (Valid Argument), আর ভুল বা অশুদ্ধ যুক্তিকে বলা হয় অবৈধ যুক্তি (Invalid Argument)। বৈধতা তথা বৈধ বা অবৈধ শব্দ দুটি তাই শুধুমাত্র অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যুক্তি বা যুক্তির আকার, যাই বলা হোক না কেন, এই দুটি বিষয়ের সঙ্গেই বৈধতার প্রশ্নটি জড়িত। তাই বৈধতাকে অবরোহ যুক্তির নিজস্ব ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যরূপে উল্লেখ করা হয়। একটি যুক্তি বৈধ হতে পারে, আবার অবৈধও হতে পারে। তাই সমস্ত যুক্তিই বৈধ-রূপে গণ্য হতে পারে না, আবার সমস্ত যুক্তিই অবৈধ-রূপেও গণ্য হতে পারে না। এজন্য কোনো কোনো যুক্তি বৈধরূপে গণ্য, আবার কোনো কোনো যুক্তি অবৈধরূপে স্বীকৃত।


1) যুক্তির আকারের সঙ্গে যুক্তির বৈধতার সম্পর্ক: আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, প্রত্যেকটি অবরোহ যুক্তির মধ্যে দুটি বিষয় দেখা যায়। আকার এবং উপাদান। একাধিক বচন সহযোগে একটি অবরোহ যুক্তি গঠিত হয়। এই বচনগুলি হল অবরোহ যুক্তির উপাদান এবং এগুলি পরিবর্তনীয়। কিন্তু যুক্তির আকারগুলি হল অপরিবর্তনীয়। যুক্তির বৈধতার বিষয়টি তাই তার অপরিবর্তনীয় সত্তা, অর্থাৎ তার আকারের সঙ্গে যুক্ত।


2) যুক্তির বৈধতার ভিত্তি হিসেবে যুক্তির আকার: সঠিক নিয়মে একটি অবরোহ যুক্তি গঠিত হলে, অর্থাৎ তার আকারটি সঠিকভাবে গঠিত হলে যুক্তিটি বৈধ (Valid)-ৰূপে গণ্য হয়, অন্যথায় যুক্তিটি অবৈধ (Invalid)-রূপে গণ্য হয়। যুক্তির নিয়মগুলি তার আকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যভাবে বললে, অবরোহ যুক্তির বৈধতা আসলে তার আকারেরই ধর্ম। একটি যুক্তিকে তখনই বৈধ বলা যাবে, যখনই দেখা যাবে যে, তার আকারটি বৈধ। যদি এমন হয় যে, কোনো একটি যুক্তির আকারটি শুধু বলা আছে কিন্তু যুক্তিটি জানা নেই, সেক্ষেত্রে যুক্তির আকারটি থেকে শত-সহস্র যুক্তি মূর্ত বা বাস্তবায়িত হতে পারে। যুক্তির আকারটি বৈধ হলে, ওই সমস্ত যুক্তিই বৈধ হয়, আর যুক্তির আকারটি অবৈধ হলে ওই সমস্ত যুক্তির সবকটিই অবৈধ হয়। এজন্য, যুক্তির বৈধতা বিচার করতে গেলে প্রথমে যুক্তি থেকে যুক্তির আকারটিকে আলাদা করতে হয় এবং বিচার করে দেখতে হয় যুক্তির আকারটি বৈধ কিনা।


3) যুক্তি ও যুক্তির আকারের বৈধতা নিরূপণ: যুক্তির আকারের বৈধতা নিরূপণের বিভিন্ন নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলিকে বিভাগ 'ক'-এর 5 এবং ৪ নং অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টিকে স্পষ্ট করা হল -  


উদাহরণ- 

যুক্তি

সকল প্রাণময় সত্তা হয় অনুভূতিসম্পন্ন। সকল বৃক্ষ হয় প্রাণময় সত্তা।

= সকল বৃক্ষ হয় অনুভূতিসম্পন্ন।

বৈধতা

এই যুক্তিটি বৈধ, কারণ এর আকারটি বৈধ।


যুক্তির আকার

সকল M হয় P সকল S হয় M

.: সকল S হয় P 


বৈধতা ও সত্যতা (Validity and Truth)


অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে বৈধতা (Validity) এবং সত্যতার (Truth) বিষয় দুটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণারূপে গণ্য করা হয়। অবরোহ যুক্তিবিজ্ঞানে সত্যতার বিষয়টি বচন-এর সঙ্গে জড়িত। কোনো বচনের সত্যতা হল সেই ধর্ম, যা দিয়ে বোঝা যায় বচনটি সত্য না মিথ্যা। কোনো বচনের বিষয়বস্তু বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলে তা সত্য (True)- রূপে গণ্য হয়। আর তা যদি না হয় তবে তা মিথ্যা (False) রূপে গণ্য হয়। সত্যতার বিষয়টি কখনোই যুক্তির সঙ্গে জড়িত নয়, তা শুধুমাত্র বচনের সঙ্গেই জড়িত। বচন দিয়ে যুক্তি তৈরি হয় ঠিকই, কিন্তু তাই বলে কোনো যুক্তিকে সত্য বা মিথ্যা বলা যায় না। যুক্তি সম্পর্কে কেবল বৈধ বা অবৈধ শব্দ দুটিই প্রযোজ্য।


সত্যতার প্রকারভেদ


অবরোহ যুক্তিবিজ্ঞানে বচনের সত্যতাকে দু-ভাগে উল্লেখ করা হয়েছে- আকারগত সত্যতা (Formal Truth) এবং বস্তুগত সত্যতা (Material Truth)।


• আকারগত সত্যতা: আমাদের চিন্তার আকারের মধ্যে যদি কোনো প্রকার স্ববিরোধিতা বা অসংগতি দেখা না দেয়, তবে তাকে বলে আকারগত সত্যতা। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, সোনার পাথরবাটি, বন্ধ্যাপুত্র, আকাশকুসুম প্রভৃতি বিষয়গুলিকে চিন্তা করতে গেলেই আমাদের চিন্তার মধ্যে অসংগতি দেখা দেয়। সে কারণেই বলা যায় যে, এই সমস্ত বিষয় যে বচনে উপস্থিত থাকে তাদের কোনো আকারগত সত্যতা নেই।


• বস্তুগত সত্যতা: বচনে প্রতিফলিত চিন্তার সঙ্গে বাস্তব জগতের যদি মিল বা সংগতি দেখা যায়, তাহলে বলা যায় যে, ওই সমস্ত বচনের বস্তুগত সত্যতা (Material Truth) আছে। আকাশ হয় নীল, ঘাস হয় সবুজ, মানুষ হয় দ্বিপদবিশিষ্ট জীব, তাজমহল হয় সুন্দর প্রভৃতি বাক্য বা বচনগুলিতে প্রতিফলিত চিন্তার সঙ্গে বাস্তবের মিল দেখা যায় বলে, এই সমস্ত বচনের বস্তুগত সত্যতা আছে বলা যায়। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে, কোনো বচন যদি আকারগতভাবে সত্য হয়, তবে তা বস্তুগতভাবে সত্য হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।


যুক্তির অবৈধতা (Invalidity of Arguments)


অবরোহ তর্কবিজ্ঞানে একটি যুক্তি যেমন বৈধ (Valid) হতে পারে, তেমনি তা অবৈধ (Invalid)-রূপেও গণ্য হতে পারে। বৈধ যুক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত হয়। অর্থাৎ, যুক্তিবাক্য বা বাক্যগুলি যদি সত্য হয় তবে, সিদ্ধান্তটি কখনোই মিথ্যা হতে পারে না। কিন্তু যুক্তিটি যদি অবৈধ হয়, তবে যুক্তি বা যুক্তিবাক্যগুলি সত্য (True) হওয়া সত্ত্বেও সিদ্ধান্তটি মিথ্যা (False) হতে পারে।


যেমন- সকল মহিলা হল মরণশীল। [সত্য] সকল পুরুষ হল মরণশীল। [সত্য] .:. সকল পুরুষ হল মহিলা। [মিথ্যা]


কোনো যুক্তির আকারটি যদি এমন হয় যে এর সিদ্ধান্তটি মিথ্যা অথচ সমস্ত যুক্তিবাক্যগুলিই সত্য, তাহলেই যুক্তিটিকে বলা হয় অবৈধ (Invalid)। একারণেই তর্কবিদরা বলে থাকেন, অবৈধ যুক্তির সিদ্ধান্তটি কখনোই যুক্তিবাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হতে পারে না। বৈধতার মতো অবৈধতার বিষয়টিও যুক্তির আকারের ওপরই নির্ভরশীল।

উদাহরণ- 

যুক্তি

a) সকল ছাত্রী হয় পড়ুয়া। b) সকল ছাত্র হয় পড়ুয়া। .. c) সকল ছাত্র হয় ছাত্রী।


A[সত্য] b[সত্য] c[মিথ্যা]



Popular posts from this blog

ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান আলোচনা করো।

কার্যকারণ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে হিউমের মতবাদটি আলোচনা করো।

নেপোলিয়নের পতনের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো।