পদের ব্যাপ্যতা (Distribution of Terms)
তর্কবিজ্ঞানে ব্যাপ্যতা বলতে পদের ব্যাপ্যতাকেই বোঝায়। যে-কোনো নিরপেক্ষ বচনে দুটি পদ থাকে, যার একটি হল উদ্দেশ্য পদ এবং অপরটি হল বিধেয় পদ। নিরপেক্ষ বচনের পদগুলি ব্যাপ্য (Distributed) হতে পারে, আবার অব্যাপ্য (Undistributed)-ও হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে ব্যাপ্যতা কী?
ব্যাপ্যতার সংজ্ঞা (Definition of Distribution)
প্রত্যেকটি পদের দুটি দিক আছে-পরিমানের দিক এবং গুণের দিক। পদের পরিমানকে বলা হয় তার ব্যাস্তুর্থ এবং তার গুণকে বলা হয় তার জাত্যর্থ। কোনো পদের মাধ্যমে যদি তার সম্পূর্ণ ব্যস্তর্থ (Denotation)-কে উল্লেখ বা নির্দেশ করা হয়, তখন বলা হয় যে পদটি ব্যাপ্য (Distributed)। অর্থাৎ, কোনো একটি পদের ব্যাপ্যতার মাধ্যমে-সেই পদ দ্বারা নির্দেশিত বিষয়টির সম্পূর্ণ পরিমাণকে উল্লেখ করা হয়েছে কি না, তা বোঝা যায়। যদি দেখা যায় যে, বিষয়টির সম্পূর্ণ পরিমাণকে নির্দেশ করা হয়েছে, তবেই বলা হবে যে, পদটি ব্যাপ্য হয়েছে। অন্যদিকে, কোনো পদের মাধ্যমে যদি তার পরিপূর্ণ ব্যস্তর্থকে নির্দেশ না করা হয়, তবে বলা হয় পদটি অব্যাপ্য (Undistributed)। অর্থাৎ, পদের অব্যাপ্যতার অর্থ হল সেই পদ দ্বারা নির্দেশিত পরিপূর্ণ পরিমাণ বা ব্যস্তুর্থ নির্দেশিত না হওয়া। এক্ষেত্রে ওই পদের আংশিক পরিমাণকে কেবলমাত্র নির্দেশ করা হয়।
পদ
ব্যাপ্য (যে পদে পূর্ণ ব্যক্তর্থের উল্লেখ থাকে। যেমন, সকল মানুষ।)
অব্যাপ্য (যে পদে আংশিক ব্যক্তর্থের উল্লেখ থাকে। যেমন, কোনো কোনো মানুষ।)
নিরপেক্ষ বচনসমূহে ব্যাপ্যতার নীতি (Rules of Distribution in Categorical Propositions)
নিরপেক্ষ বচন চার প্রকার- সামান্য-সদর্থক বচন (A), সামান্য-নঞর্থক বচন (E), বিশেষ-সদর্থক বচন (I) এবং বিশেষ-নঞর্থক বচন (O)। এই চার প্রকার বচনের ক্ষেত্রে ব্যাপ্যতার নিয়মকে নীচে উল্লেখ করা হল- (1) সামান্য বচনে উদ্দেশ্য পদ সবসময়ই ব্যাপ্য। বিধেয় ব্যাপ্য হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। (2) বিশেষ বচনে উদ্দেশ্য পদ সবসময়ই অব্যাপ্য। বিধেয় অব্যাপ্য হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। আবার, (3) নঞর্থক বচনে বিধেয় পদ সবসময়ই ব্যাপ্য। উদ্দেশ্য ব্যাপ্য হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে । (4) সদর্থক বচনে বিধেয় পদ সবসময়ই অব্যাপ্য। উদ্দেশ্য অব্যাপ্য হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।
ব্যাপ্যতার স্মৃতি সহায়ক শব্দ (Memorial Word of Distributions)
নিরপেক্ষ বচনের কোনো পদ কাকে ব্যাপ্য করে, তা মনে রাখার সুবিধার জন্য একটি অর্থহীন সাংকেতিক শব্দকে মনে রাখতে হয়। এটি হল- As Eb In Op (আসেবিনপ]
এই শব্দটির অন্তর্গত যে চারটি Capital Letter আছে, সেগুলি চারটি নিরপেক্ষ বচন, অর্থাৎ-A, E, 1, 0-কে চিহ্নিত করে। আর এর অন্তর্গত যে চারটি Small Letter আছে, তা নিরপেক্ষ বচনগুলির ব্যাপ্যতাকে চিহ্নিত করে। যেমন-
S = Subject (উদ্দেশ্য)
b = both Subject and Predicate (উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয়ই)
n = none of Subject or Predicate (উদ্দেশ্য ও বিধেয়- কোনোটিই নয়)
p = Predicate (বিধেয়)
সুতরাং, এই সংকেতমূলক শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে ব্যাপ্যতার সূত্রগুলিকে পাওয়া যায়।
As Eb In Op =
A(s) Subject
E(b) both
I(n) none
O(p) predicate
subject predicate
অর্থাৎ,
subject and predicate
As = A-বচন শুধুমাত্র উদ্দেশ্যকেই ব্যাপ্য করে।
Eb = E-বচন উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয়কেই ব্যাপ্য করে।
In = I-বচন কোনোটিকেই ব্যাপ্য করে না।
Op = O-বচন শুধুমাত্র বিধেয়কে ব্যাপ্য করে।
ব্যাপ্যতার ক্ষেত্রে ইউলারের বৃত্ত (Euler's Circle in the Field of Distributions)
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত সুইস তর্কবিদ ইউলার (Euler) নিরপেক্ষ বচনগুলির ব্যাপ্যতাকে কয়েকটি বৃত্তের উপস্থাপনার মাধ্যমে আরও সহজ করে বুঝিয়েছেন।
1) A-বচন শুধুমাত্র উদ্দেশ্য তথা S-কে ব্যাপ্য করে, বিধেয় তথা P-কে করে না, তা তিনি পাশের চিত্রটি দ্বারা বুঝিয়েছেন। এখানে ১ তথা উদ্দেশ্য পদের পরিপূর্ণ ব্যস্তর্থকে এবং তথা বিধেয় পদের আংশিক ব্যস্তর্থকে সূচিত করা হয়েছে। এর ফলে উদ্দেশ্য তথা ৪ পদটি ব্যাপ্য, কিন্তু বিধেয় তথা P পদটি অব্যাপ্য হয়েছে।
2) E-বচন যে উদ্দেশ্য (S) এবং বিধেয় (P)- এই উভয় পদকেই ব্যাপ্য করে, তা, বোঝাবার জন্য ইউলার পাশের চিত্রটি তুলে ধরেছেন। এখানে দেখানো হয়েছে, S এবং P শ্রেণি দুটির সম্পূর্ণ ব্যস্তর্থকে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এও দেখানো হয়েছে যে কেউ কারোর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
3) i-বচন উদ্দেশ্য (S) এবং বিধেয় (P) কোনো পদকেই ব্যাপ্য করে না, তা বোঝাবার জন্য ইউলার পাশের চিত্রটি উপস্থাপন করেছেন। এখানে দেখানো হয়েছে, ১ তথা উদ্দেশ্য এবং P তথা বিধেয় শ্রেণির কোনোটিরই সম্পূর্ণ ব্যক্তর্থকে নির্দেশ করা হয়নি। সেকারণেই এখানে উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই ব্যাপ্য নয়।
4) ০-বচন যে, শুধুমাত্র বিধেয় পদ (P)-কে ব্যাপ্য করে, উদ্দেশ্য পদ (S)-কে করে না, তা বোঝাবার জন্য ইউলার পাশের চিত্রটি অঙ্কন করেছেন। এখানে চিত্রটির মাধ্যমে বিধেয় (P) পদটির সম্পূর্ণ ব্যক্তর্থকে দেখানো হলেও উদ্দেশ্য (S) পদটির সম্পূর্ণ ব্যক্তর্থকে না দেখিয়ে আংশিক ব্যক্তর্থকে দেখানো হয়েছে। সুতরাং, উদ্দেশ্য পদটি ব্যাপ্য না হলেও বিধেয় পদটি ব্যাপ্য হয়েছে।