শক্তি বলতে কোনো কাজ করার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে শক্তিসম্পদ বলতে এমন সমস্ত পদার্থকে বোঝানো হয় যেগুলি বল প্রয়োগ বা তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কাজ করতে সক্ষম। আধুনিক যুগে জৈব শক্তির তুলনায় জড় শক্তির প্রয়োগ বেশি, কারণ জড়শক্তির কার্যকারিতা জৈব শক্তির তুলনায় অনেক বেশি। শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে জড় শক্তির চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
শক্তি সম্পদের প্রকারভেদ (Types of Power Resources)
বিভিন্ন নির্ধারকের ভিত্তিতে শক্তি সম্পদকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়-
উৎসের ভিত্তিতে: শক্তিকে উৎসের ভিত্তিতে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- জৈব শক্তি সম্পদ (Animate Energy Resource): যে শক্তির উৎস জীবদেহ, তাকে জৈব শক্তি বলে। যেমন-পশুশক্তি, মানুষের কায়িক শক্তি। জড় শক্তি সম্পদ (Inanimate Energy Resource): যে শক্তির উৎস অজৈব পদার্থ, তাকে জড় শক্তি বলে। যেমন-কয়লা, সৌররশ্মি, ভূতাপ প্রভৃতি থেকে প্রাপ্ত শক্তি।
ক্ষয়িষ্ণুতার ভিত্তিতে: অপুনর্ভব বা গচ্ছিত শক্তি সম্পদ (Non-renewable or Fund Energy Re-
source): পৃথিবীতে যেসব শক্তি সম্পদ ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে শেষ হয়ে যায় এবং যেসব শক্তি সম্পদের সঞ্চয় ভাণ্ডার সীমিত তাদের অপুনর্ভব বা গচ্ছিত শক্তি বলে, যেমন-কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানি। পুনর্ভব বা প্রবহমান শক্তি (Renewable or Flow Energy Resource): যেসব শক্তি সম্পদ বারংবার ব্যবহারের ফলেও ফুরিয়ে যায় না বা সাময়িক সময়ের জন্য এগুলির পরিমাণ কমে গেলেও আবার সৃষ্টি হতে পারে, তাদের পুনর্ভব বা প্রবহমান
শক্তি বলে। যেমন-সৌরশক্তি, ভূতাপশক্তি, জৈব গ্যাস শক্তি, জলবিদ্যুৎ শক্তি প্রভৃতি।
উৎপাদন ও ব্যবহারের ভিত্তিতে প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি সম্পদ (Conventional Energy Resource): যেসব শক্তি সম্পদ বহুদিন ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং বর্তমানেও প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত ও ব্যবহৃত হয়, তাদের প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি সম্পদ বলে। যেমন-কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, পারমাণবিক শক্তি, তাপবিদ্যুৎ শক্তি, জলবিদ্যুৎ শক্তি প্রভৃতি। উৎস: প্রচলিত শক্তির প্রধান উৎসগুলি হল কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, মোনাজাইট, ইলমেনাইট, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, জলপ্রবাহ প্রভৃতি। সুবিধা: (১) প্রচলিত শক্তির অধিকাংশ উৎসগুলি প্রয়োজন অনুসারে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা সম্ভব। (ii) প্রচলিত শক্তির উৎসগুলি বহুদিন ধরে ব্যবহৃত হওয়ায় এই উৎসগুলি থেকে শক্তি উৎপাদনের উপযুক্ত প্রযুক্তি সহজেই পাওয়া যায়। অসুবিধা: (i) প্রচলিত শক্তির উৎসগুলি বারংবার ব্যবহারের ফলে শেষ হয়ে যায়, অর্থাৎ, এই শক্তির উৎসগুলি ক্ষয়ি폼 বা গচ্ছিত প্রকৃতির। (ii) প্রচলিত শক্তির উৎসের ভাণ্ডার পৃথিবীর কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই অবস্থিত। (iii) সাধারণত প্রচলিত শক্তির ব্যবহারের ফলে পরিবেশদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। (iv) প্রচলিত শক্তি সম্পদের প্রাপ্যতার বিভিন্নতার কারণে আঞ্চলিক বৈষম্য লক্ষ করা যায়। (v) প্রচলিত শক্তি সম্পদ উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণত উন্নত দেশগুলি মুখ্য ভূমিকা পালন করে, কারণ এক্ষেত্রে আধুনিক কৃৎকৌশলের প্রয়োগ ও প্রচুর মূলধন বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
• অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি সম্পদ (Non-conventional Energy Resource): যেসব শক্তি সম্পদ বর্তমানে খুব সামান্য পরিমাণে উৎপাদিত ও ব্যবহৃত হয়, কিন্তু ভবিষ্যতে ব্যবহারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি সম্পদ হয়, তাদের প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি সম্পদ বলে। যেমন-বায়ুশক্তি, জোয়ারভাটা শক্তি, ভূতাপ শক্তি, সৌরশক্তি প্রভৃতি। উৎসঃ অপ্রচলিত শক্তির প্রধান উৎসগুলি হল-বায়ু শক্তি, সৌরশক্তি, জৈব গ্যাস শক্তি, জোয়ারভাটা শক্তি, সমুদ্র জলের তাপশক্তি, জীবভর শক্তি প্রভৃতি। সুবিধা: (১) পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলেই অপ্রচলিত উৎসগুলি পাওয়া যায়। (ii) এই শক্তি সম্পদগুলি বারবার ব্যবহার করলেও শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। (iii) অচিরাচরিত শক্তি সম্পদগুলি ব্যবহারের ফলে পরিবেশদূষণ ঘটে না। (iv) ক্ষুদ্রমাত্রায় ব্যবহারের সুবিধা থাকায় প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করতে হয় না। অসুবিধা: (i) পৃথিবীর সব অঞ্চলে সমপরিমাণে অপ্রচলিত সম্পদগুলি পাওয়া যায় না। যেমন-তুন্দ্রা অঞ্চলে পর্যাপ্ত সৌরশক্তি ও সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে জোয়ারভাটা শক্তির অভাব লক্ষ করা যায়। (ii) এই ধরনের শক্তির উৎসগুলি বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিনিময় করা সম্ভব নয়। (iii) বহুল ব্যবহৃত না হওয়ায় এক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রযুক্তি সর্বত্র পাওয়া যায় না।।